আমি কি বাজারের চিংড়িমাছ? জিজ্ঞাসা মানসের

ঘরের বিবাদ রফায় মেটানোর চেষ্টা সত্ত্বেও মানস ভুঁইয়াকে ঘিরে কংগ্রেসের বিড়ম্বনা বাড়ছেই। পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে হাসি চওড়া হচ্ছে তৃণমূলের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৬
Share:

ঘরের বিবাদ রফায় মেটানোর চেষ্টা সত্ত্বেও মানস ভুঁইয়াকে ঘিরে কংগ্রেসের বিড়ম্বনা বাড়ছেই। পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে হাসি চওড়া হচ্ছে তৃণমূলের। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের সুপারিশ না মেনে মানসবাবুকে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান করে শাসক পক্ষ যে চাল চেলেছে, তাতে ইদের পরে আন্দোলনের কথা ভুলে এখন কংগ্রেসকে ঘর সামলাতে হচ্ছে!

Advertisement

মানসবাবুর দাবি মেনেই কাল, শনিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী পরিষদীয় দলের বৈঠক ডেকেছেন। কিন্তু সেই বৈঠকে সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, সোমেন মিত্র, দীপা দাশমুন্সির মতো নেতা-নেত্রীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ মানসবাবু পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘আমাকে যে ভাবে অসম্মান করা হয়েছে, তা নিয়ে বিধায়কদের বৈঠক ডাকতে বলেছিলাম। কিন্তু অধীরবাবু প্রদেশ কংগ্রেসের বর্ধিত বৈঠক ডেকেছেন। উনি কী চাইছেন, তা বুঝতে পারছি না!’’ এই বৈঠকে কেন খালেদ এবাদুল্লা, রমেন পাণ্ডে, অজয় ঘোষদের মতো প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকদের ডাকা হচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মানসবাবু।

অধীর আবার পাল্টা বলেছেন, ‘‘মানসবাবুর কথা মতো বিধায়কদেরই বৈঠকে ডাকা হচ্ছে। সঙ্গে আলোচনার জন্য সাংসদ ও কয়েক জন বর্যীয়ান নেতাদেরও ডাকা হয়েছে।’’ তাঁর মতে, বিষয়টি এখন কেবল পরিষদীয় দল বা বিধানসভার একটি পদে সীমাবদ্ধ নেই। বিষয়টি এখন পুরোপুরি রাজনৈতিক। পিএসি-র চেয়ারম্যান কে হবেন, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কেন এত আগ্রহী— সে প্রশ্ন তুলে অধীর বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসে বিধানসভায় সিএজি রিপোর্ট পেশ করেনি। পিএসি চেয়ারম্যান যদি অফিসারদের কাছে সরকারি খরচের হিসাব চান, তা হলে দুর্নীতির কঙ্কাল বেরিয়ে পড়বে। ভয় সেখানেই।’’

Advertisement

তবে কি মানসবাবু পিএসি-র চেয়ারম্যান হলে সরকারি দুর্নীতি আড়ালের চেষ্টা করবেন? বিধানসভায় বাজেট বিতর্কে সরকারকে আক্রমণ করে আর্থিক অনিয়মের কথা তুললেও পদে বসে মানসবাবু ‘সমঝোতা’ করবেন? কংগ্রেসের একাংশ বলছেন, মমতার সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠকে কী কথা হয়েছে, তা জানা যায়নি। তাতেই সংশয়! শনিবার তাঁকে পিএসি-চেয়াম্যান পদ ছাড়ার ‘অনুরোধ’ বা ‘নির্দেশ’ দেওয়া হতে পারে বুঝে মানসবাবু নিশানা করেছেন মান্নানকে। মান্নান অধীরকে বিভ্রান্ত করছেন— এই অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে পিএসি-র চেয়ারম্যান করা না হলে তালিকার প্রথমে নাম রাখা হল কেন? মান্নান কাদের সঙ্গে কথা বলে দিল্লি থেকে সুজন চক্রবর্তীর নাম অনুমোদন করে আনলেন? আমি কি বাজারের চিংড়িমাছ?’’

চেষ্টা জারি রাখলেও মানসবাবু মুখ খোলায় মান্নানও বৃহস্পতিবার পাল্টা বলেন, ‘‘বার বার মর্যাদা দেওয়া সত্ত্বেও মানস যে ভাবে প্রকাশ্যে বিরুদ্ধে কথা বলছে, তা অসম্মানজনক। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী সিপিএমকে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। আমি সে কথাই জানিয়েছি। সনিয়া যদি বলতেন কংগ্রেস থেকে কেউ হোক, তা হলে মানসবাবুই হতে পারতেন!’’

মানসবাবু পদ না ছাড়লে কি তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে? জবাব দিতে চাননি অধীর। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা যে ভাবে ‘গাজর এবং ডান্ডা নীতি’ (গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং পিএসি-র পদ) নিয়ে চলছেন, মানসদা যাতে তাতে প্রভাবিত না হন, সে কথাই তাঁকে বোঝানো হবে। আর দলনেত্রী সনিয়াজি’র সিদ্ধান্তকে সম্মান দিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন