Visva-Bharati University

বিশ্বভারতী কখনও জমি নিয়ে কোনও বেনিয়মের কথা জানায়নি: অমর্ত্য

গত শতকের চল্লিশের দশকে অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেনকে ১২৫ ডেসিমেল জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ় দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৩৬
Share:

অমর্ত্য সেন। ছবি সংগৃহীত

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র সীমানায় বিশ্বভারতীর জমিও ঢুকে গিয়েছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বৃহস্পতিবার নোবেলজয়ীর পক্ষে দাঁড়িয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তথা কেন্দ্রের শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার এই বিতর্ক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে অমর্ত্যবাবুর জবাব, ‘‘বিশ্বভারতী কোনও দিন আমাদের জমি নিয়ে কোনও বেনিয়মের কথা জানায়নি।’’ এ ব্যাপারে যা করার, তা তিনি আইনের সাহায্যেই করবেন বলেও জানিয়েছেন অমর্ত্যবাবু।

Advertisement

বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বলেই অমর্ত্য সেনের মতো মনীষীকে আক্রমণ করা হচ্ছে। বাংলার পক্ষ থেকে অমর্ত্য সেনের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার সরাসরি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘বিশ্বভারতীতে কিছু নব্য বহিরাগত আপনার পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে আশ্চর্যজনক এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন। এতে আমি বেদনাহত এবং দেশের সংখ্যাগুরুদের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে যে লড়াই আপনি শুরু করেছেন, আমি তাকে পূর্ণ সমর্থন জানাই। এই লড়াই-ই আপনাকে এই সব অসত্য শক্তির শত্রুতে পরিণত করেছে।’’ অসহিষ্ণুতা ও সর্বগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে তাঁকে ‘বোন ও বন্ধু’ হিসেবে গণ্য করার জন্যও অমর্ত্য সেনকে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিশ্বভারতী সূত্রের দাবি, গত শতকের চল্লিশের দশকে অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেনকে ১২৫ ডেসিমেল জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ় দেওয়া হয়েছিল। এই জমিতেই গড়ে উঠেছে অমর্ত্যবাবুদের পারিবারিক বাড়ি ‘প্রতীচী’। ২০০৬ সালে অমর্ত্য সেনের আবেদনের ভিত্তিতে জমির লিজ় তাঁর নামে হস্তান্তর করা হয়।

Advertisement

কিন্তু, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, জমির মাপ করে দেখা যায়, পাশাপাশি দু’টি লিজ় দেওয়া জমির মধ্যবর্তী বিশ্বভারতীর নিজস্ব ১৩ ডেসিমেল জমিও ঢুকে রয়েছে ‘প্রতীচী’র সীমানার ভিতরে। অর্থাৎ, ‘প্রতীচী’র জমির পরিমাণ এখন ১৩৮ ডেসিমেল, ১২৫ ডেসিমেল নয়। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের আরও অভিযোগ, রজতকান্ত রায় যখন উপাচার্য ছিলেন, তখন অমর্ত্যবাবুকে বিষয়টি একাধিক বার মৌখিক ভাবে জানানো হলেও তিনি উচ্চবাচ্য করেননি।

অমর্ত্যবাবু এ দিন বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীর যে জমিতে আমাদের বাড়ি, সেটি পুরোপুরি দীর্ঘমেয়াদি লিজ় নেওয়া আছে, এবং সেই লিজ়ের মেয়াদ ফুরোতে এখনও বহু দেরি আছে। আমার বাবা নিজে আরও কিছু জমি কিনেছিলেন, সুরুল মৌজার সরকারি খতিয়ানে তার মালিকানার তথ্যও যথাবিধি নথিভুক্ত আছে।’’

বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের মতাদর্শের বিরুদ্ধে অমর্ত্য সেন দীর্ঘদিন ধরেই সরব। তাঁর অভিযোগ, ভারতে বহু শতক ধরে চর্চিত বহুত্ববাদী ভাবধারাকে ধ্বংস করতে চায় কেন্দ্রের শাসক শক্তি। এ জন্য অতীতে বহু বারই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। বলা হচ্ছে, ‘প্রতীচী’র জমি ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ তোলাটা সেই আক্রমণেরই নতুন দিক। এ প্রসঙ্গে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হলে অমর্ত্যবাবু বলেন, ‘‘শান্তিনিকেতনে আমার জন্ম, সেখানেই বড় হয়েছি, তাই সেখানকার নিজস্ব ঐতিহ্যের সঙ্গে বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্যের সংস্কৃতির বড় রকমের তফাতের বিষয়ে আমি আলোচনা করতেই পারতাম। এটাও জানি যে, তিনি দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের বলে বলীয়ান। কিন্তু আমি যা করার, ভারতের আইনের সাহায্যেই করতে চাইব। নিজের মনের জোর সংগ্রহের জন্য হয়তো অনেক কাল আগে অবনীন্দ্রনাথের আঁকা আমাদের বাড়ির ছবিটির, বা অনুরূপ নানা সম্পদের সাহায্যও নিতে পারি।’’

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির ভুল রেকর্ডের ঘটনা প্রায় ৭৮টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অমর্ত্য সেনের পাশাপাশি বিখ্যাত শিল্পী সুরেন কর, বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধনের মতো বেশ কিছু ব্যক্তির শান্তিনিকেতনের বাসভবনেও ঢুকে রয়েছে বিশ্বভারতীর জমি।’’ এই সংক্রান্ত তথ্য রাজ্যের ভূমি দফতরে পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।

সম্প্রতি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বৈঠকে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে হকার উচ্ছেদে আপত্তি জানিয়ে তাঁকে ফোন করেছিলেন অমর্ত্য সেন। তখন তিনি নিজেকে নোবেলজয়ী বলে পরিচয় দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন উপাচার্য। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে অমর্ত্যবাবুর কটাক্ষ, ‘‘উপাচার্যকে আর আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ কাল্পনিক কথোপকথনের কাহিনি উদ্ভাবন করতে হবে না, যে আলাপের শুরুতে আমি ভারতরত্ন বলে নিজের পরিচয় দিই— আমাকে এ-রকম ভাবে নিজের পরিচয় দিতে কেউ কস্মিনকালেও শোনেননি। উপাচার্য অবশ্য উদ্ভাবনী প্রতিভায় ভরপুর এক জন শিল্পী বটে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন