Ayush surgery

আয়ুষে অস্ত্রোপচার নিয়ে সংশোধনী

মন্ত্রক স্পষ্ট করে দিতে চায় যে, আয়ুর্বেদের স্নাতকোত্তর শল্য ও শালাক্য বিভাগের পড়ুয়ারাই শুধু ডিগ্রি অর্জনের পরে ৫৮ ধরনের শল্যচিকিৎসা স্বাধীন ভাবে করতে পারবেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২০ ০৫:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি।

আয়ুষ চিকিৎসকদের শল্যচিকিৎসার প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তি ঘিরে প্রশ্ন-সন্দেহ-বিতর্কের মুখে রবিবার সংশোধনী দিল আয়ুষ মন্ত্রক।

Advertisement

ওই মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, আয়ুর্বেদের স্নাতকোত্তর পাশ চিকিৎসকদের শল্যচিকিৎসা নিয়ে যে-খবর বেরিয়েছে, তাতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এমন একটি ধারণার সৃষ্টি হয়েছে, যেন সব আয়ুষ চিকিৎসকই শল্যচিকিৎসা করতে পারবেন। এই অবস্থায় মন্ত্রক স্পষ্ট করে দিতে চায় যে, আয়ুর্বেদের স্নাতকোত্তর শল্য ও শালাক্য বিভাগের পড়ুয়ারাই শুধু ডিগ্রি অর্জনের পরে ৫৮ ধরনের শল্যচিকিৎসা স্বাধীন ভাবে করতে পারবেন। ৩৯ ধরনের সাধারণ শল্যচিকিৎসার সঙ্গেই থাকছে শালাক্য বিভাগের অধীন হাড়, নাক-কান-গলা ও দাঁতের ১৯ ধরনের শল্যচিকিৎসা। অ্যালোপ্যাথিতে ‘ইয়ার-নোজ়-থ্রোট’ তথা ‘ইএনটি’ বলতে কান-নাক-গলার অংশের চিকিৎসা বোঝায়। আয়ুর্বেদের শালাক্য তন্ত্রে গলা ও গলার উপরের যাবতীয় অংশের চিকিৎসা করা হয়। মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, এটি শল্যচিকিৎসা নিয়ে নতুন কোনও নির্দেশিকা নয়। ২০১৬ সালেই এমন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল।

এই সংশোধনী নিয়ে এ দিন আইএমএ বা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন বা বিতর্কের মূলে সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ান মেডিসিনের (সিসিআইএম) জারি করা শনিবারের বিজ্ঞপ্তি। তাতে বলা হয়েছিল, ৩৯টি সাধারণ অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি চোখ, নাক, গলা ও দাঁতের চিকিৎসাভুক্ত ১৯টি বিষয়ে আয়ুর্বেদের পিজিটি-দের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ৫৮টি বিষয়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি চিকিৎসা পদ্ধতি আয়ুর্বেদ পঠনপাঠনের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু একসঙ্গে ৫৮টি বিষয়ের উল্লেখ করে অস্ত্রোপচারের প্রশিক্ষণে অনুমতি দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম।

Advertisement

ওই নির্দেশিকায় ক্ষুব্ধ আইএমএ-র পক্ষ থেকে আয়ুষ মন্ত্রকের অধীন সিসিআইএম-কে চিঠি লিখে আয়ুর্বেদ শল্যচিকিৎসকদের জন্য আয়ুর্বেদের প্রাচীন পুঁথি থেকে শল্যচিকিৎসার নিজস্ব নিয়মাবলি তৈরি করে নিতে অনুরোধ করা হয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে শল্যচিকিৎসার যে-পদ্ধতি লিপিবদ্ধ রয়েছে, সিসিআইএম যেন সেটাকে নিজেদের বলে দাবি না-করে। অ্যালোপ্যাথির আধুনিক কোনও শল্যচিকিৎসককে যেন আয়ুর্বেদ কলেজে নিয়োগ করা না-হয়, কেন্দ্রকে সেই অনুরোধও করেছে আইএমএ।

শনিবারের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তির বক্তব্য কতটা চিকিৎসাবিজ্ঞানসম্মত, অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সম্পাদক ও সার্জন মানস গুমটা তা নিয়ে সন্দিহান। ‘‘উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া আয়ুর্বেদের এক জন চিকিৎসক সাধারণ অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন কী ভাবে? সাধারণ মানুষের সুরক্ষার বিষয়টি জড়িত, তাই সকলের মতামত নেওয়া উচিত ছিল,’’ বলেন মানসবাবু। কেন্দ্রের এই ধরনের অনুমতির পরে এমবিবিএসে প্রবেশিকা পরীক্ষার (নিট) কী গুরুত্ব থাকে, সেই প্রশ্নও তোলা হয়। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির অ্যালোপ্যাথির চিকিৎসকদের দিয়ে আয়ুর্বেদ পড়ুয়াদের সার্জারির শিক্ষা প্রদান করা হতে পারে বলে আশঙ্কা আইএমএ-র।

এই ধরনের প্রতিক্রিয়া অনভিপ্রেত বলে মনে করেন জেবি রায় আয়ুর্বেদ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের সার্জারির বিভাগীয় প্রধান সুভাষ দত্ত। ‘‘দীর্ঘদিন ধরে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিকাঠামো যে-ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, আয়ুর্বেদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। সেই লক্ষ্যে কোনও পদক্ষেপ করলে ‘গেল গেল’ রব তোলা হচ্ছে কেন? একই রোগের ওষুধ আলাদা। কিন্তু রোগ নির্ণয়ে দু’ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিতেই ইউএসজি, এক্স-রে, সিটি স্ক্যানের ব্যবহার আছে,’’ বলেন সুভাষবাবু।

সমালোচনার ভাষাভঙ্গি নিয়ে আপত্তি রয়েছে কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকারেরও। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের অভাবের কথা ভুললে চলবে না। হিংস্র ভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে ১৩০ কোটির দেশে প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের প্রয়োজনের বিষয়টি অনুভব করতে হবে।’’

আয়ুষ মন্ত্রকের সচিব বৈদ্য রাজেশ কোটেচা রবিবার জানান, শনিবারের নির্দেশিকা নতুন কোনও সিদ্ধান্ত নয়, পুরনো নীতিরও পরিবর্তন করা হয়নি। ওই নির্দেশিকায় মূলত অতীতের নিয়ম স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আয়ুষের সব স্নাতকোত্তর পড়ুয়ারাই শল্যচিকিৎসা করতে পারবেন না। একমাত্র যাঁরা শল্য ও শালাক্য শাখায় দক্ষতা অর্জন করেছেন, তাঁরাই তা করতে পারবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন