West Bengal News

সব রাজ্যে প্রচার করুন বাংলার পরিস্থিতির কথা: দিল্লিতে বার্তা অমিত শাহের

কী ভাবে মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আরও নিবিড় করতে হবে এবং যে কোনও ইস্যুতে দলের বক্তব্য বা অবস্থান কী ভাবে মিডিয়ায় তুলে ধরতে হবে, তা নিয়েই মূলত আলোচনা হয় রবিবারের ওই বৈঠকে।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮ ১৯:৪১
Share:

পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি সারা দেশে প্রচারের নির্দেশ অমিত শাহের।

মেরেকেটে আর মাস ছয়েক। তার পরেই ঘোষণা হয়ে যাবে লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট। কোন কোন রাজ্যে ধাক্কা লাগতে পারে, তা হিসেব করে নিয়ে অন্য কয়েকটি রাজ্যে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে বিজেপি। আর সেই তালিকায় অগ্রগণ্য নাম পশ্চিমবঙ্গের। দলের মিডিয়া সেলের সর্বভারতীয় বৈঠকে অমিত শাহ-রাম লালদের বার্তা, পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদের উপরে আক্রমণের অভিযোগকে জাতীয় ইস্যু করে তুলতে হবে। বাংলায় বিজেপি কর্মীদের খুন হওয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রতিটি রাজ্যের মিডিয়ায় বিজেপিকে সরব হতে হবে।

Advertisement

রবিবার দিল্লিতে বৈঠক হয়েছে বিজেপি-র মিডিয়া সেলের। বৈঠক না বলে সভা বলাই শ্রেয়। দেশের সব ক’টি রাজ্য থেকেই প্রতিনিধিরা ছিলেন বিজেপি সদর দফতরে আয়োজিত সেই সভায়। বাংলা থেকে যেমন ছিলেন রাজ্য বিজেপি-র দুই সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু এবং রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য বিজেপির মিডিয়া-ইনচার্জ সপ্তর্ষি চৌধুরী-সহ মোট ৬ জন।

বিজেপি-র মিডিয়া সেলের সর্বভারতীয় প্রধান তথা সাংসদ অনিল গুলানি ওই সভায় পৌরোহিত্য করেন। প্রধান বক্তা ছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) রাম লাল, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিরা।

Advertisement

কী ভাবে মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আরও নিবিড় করতে হবে এবং যে কোনও ইস্যুতে দলের বক্তব্য বা অবস্থান কী ভাবে মিডিয়ায় তুলে ধরতে হবে, তা নিয়েই মূলত আলোচনা হয় রবিবারের ওই বৈঠকে। খবর বিজেপি সূত্রের। বঙ্গ বিজেপি-র মিডিয়া ইনচার্জ তথা মিজোরাম বিজেপি-র মিডিয়া সেল দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পর্যবেক্ষক সপ্তর্ষি চৌধুরী বললেন, ‘‘বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে বিজেপি-র হয়ে যাঁরা অংশগ্রহণ করছেন রাজনৈতিক আলোচনায়, তাঁদের আরও বেশি পড়াশোনা করতে হবে বলে অরুণ জেটলি বার্তা দিয়েছেন। জাতীয় স্তরের টেলিভিশন চ্যানেলে হোক বা রাজ্য স্তরের, যাঁরা বিজেপি-র হয়ে কথা বলবেন, তাঁদের প্রত্যেককে যে কোনও ইস্যুতে পার্টির লাইন পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানতে হবে— এমনই বার্তা দেওয়া হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: কলকাতায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু প্রেমিকের, আত্মহত্যা করল কিশোরী প্রেমিকা

জেটলির এই বার্তা বিজেপি মুখপাত্রদের উপরে চাপ বাড়িয়েছে ঠিকই। কিন্তু অমিত শাহ এবং রাম লালের বক্তব্য সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে, তাতে বাংলার শাসক দলের চিন্তা বাড়তে পারে। ‘‘বাংলায় বিরোধী দলের কর্মীদের উপর কতগুলি আক্রমণ হয়েছে, কত জন খুন হয়েছেন, কত জন বিজেপি কর্মীর প্রাণ গিয়েছে, সে সব কথা বিশদে তুলে ধরতে হবে গোটা দেশের সামনে। তাই জাতীয় স্তরের মিডিয়ায় এবং বিভিন্ন রাজ্যের মিডিয়ায় বিজেপি-র বক্তব্য তুলে ধরেন যে মুখপাত্ররা, তাঁরা প্রত্যেকেই যেন বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। অমিত শাহ এবং রাম লাল, দু’জনেই মিডিয়া সেলকে এই বার্তা দিয়েছেন।’’—বললেন সায়ন্তন বসু।

অর্থাৎ, শুধু বাংলার বিজেপি মুখপাত্ররা নন, অন্য রাজ্যগুলির বিজেপি মুখপাত্ররা এবং সর্বভারতীয় মুখপাত্ররাও এ বার থেকে মিডিয়ায় সরব হবেন পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে। বিজেপি সূত্রের খবর তেমনই। তাতে কী লাভ হবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নীতির মাধ্যমে অমিত শাহরা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইবেন। প্রথমত, বাংলার কথা কতটা গুরুত্ব দিয়ে বিজেপি-র সর্বভারতীয় নেতৃত্ব ভাবছেন, তা পশ্চিমবঙ্গবাসীর সামনে তুলে ধরা যাবে। দ্বিতীয়ত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে প্রায় গোটা দেশ ঘুরে ঘুরে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন, তার পাল্টা একটা ছবি তুলে ধরা যাবে মমতার রাজ্যের পরিস্থিতিকে ভয়ঙ্কর হিসেবে ব্যাখ্যা করে।

আরও পডু়ন: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়, পুজোর মুখেই ভাসবে রাজ্য!

বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপি কি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন? নাকি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থানে বিজেপি-র আসন বড় সংখ্যায় কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, সেই ক্ষতির কিছুটা বাংলা থেকে পূরণ করার জন্য বিজেপি দেখাতে চাইছে যে, বাংলাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তেমনই মনে করছেন। বাংলায় বিরোধী দলগুলির পক্ষে রাজনীতি করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে, এমন একটা ছবি গোটা দেশের মিডিয়ায় তুলে ধরা বিজেপির নির্বাচনী ‘স্ট্র্যাটেজি’র অঙ্গ, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বিজেপি নেতারা একে সরাসরি ‘স্ট্র্যাটেজি’ বলে স্বীকার করছেন না। রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘স্ট্র্যাটেজির কিছু নেই। বাংলার রাজনীতি বেনজির পরিস্থিতিতে পৌঁছে গিয়েছে। সেটা গোটা দেশের জানা উচিত। অমিতজি, রাম লালজি সেই পরামর্শই দিয়েছেন।’’ রাজুর যুক্তি, ‘‘যদি স্ট্র্যাটেজিই হত, তা হলে শুধু বিজেপি কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার কথা তুলে ধরতে বলা হত। কিন্তু আমরা তো তা বলছি না। সমস্ত বিরোধী দলের কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, ছাত্ররা গুলি খেয়ে মরছেন। বিজেপি সেই সবার কথাই গোটা দেশের সামনে তুলে ধরবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন