(বাঁ দিকে) অমিত শাহ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে) —নিজস্ব চিত্র।
বাংলায় দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নপূরণের অঙ্গীকার করলেন অমিত শাহ। বিজেপি নেতা সজল ঘোষের সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের পুজো উদ্বোধনে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘‘বাংলার বিকাশের মাধ্যমে বিকশিত ভারতের যে স্বপ্ন দেখেছেন আমাদের নেতা নরেন্দ্র মোদী, তা যেন সিদ্ধ করতে পারি।’’
আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ভোটের দামামাও বেজে গিয়েছে। চলতি বছরে ইতিমধ্যেই রাজ্যে তিনটি সভা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। দুর্নীতি, অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে বিঁধে বঙ্গের বিজেপি নেতাদের জন্য নির্বাচনী ভাষ্যও তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। এ রাজ্যে ২০২৬ সালের নির্বাচনে জিততে বিজেপি যে মরিয়া, বুঝিয়ে দিয়েছেন তা-ও। শাহের ভাষণে মোদীর সেই স্বপ্ন পূরণেরই অঙ্গীকার শোনা গেল।
এ নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করতে শুরু করেছে তৃণমূল। শাসকদলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগে অমিত শাহকে বলুন, বাংলার পাওনা মেটাতে। ২ লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ওঁরা সেই টাকা কবে ছাড়বেন? যদি অমিত শাহের মনে হয় যে তৃণমূল মিথ্যা কথা বলছে, তা হলে উনি কোনও তর্কসভায় আসুন।’’
দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে বৃহস্পতিবার রাতেই কলকাতায় পৌঁছেছিলেন শাহ। সফরসূচি মেনে শুক্রবার বেলা ১১টার একটু আগে তিনি নিউ টাউনের হোটেল থেকে বেরিয়ে পুজো উদ্বোধনে যান। প্রথমে গিয়েছিলেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারে। সেখানে পুজো উদ্বোধন সেরে বক্তৃতাও করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি, নির্বাচনের পর এই বাংলায় এমন সরকার আসুক, যারা সোনার বাংলা নির্মাণ করতে পারবে। আমাদের বাংলা আবার সুরক্ষিত, সমৃদ্ধ হোক। কবিগুরু যে বাংলার কল্পনা করেছিলেন, আমরা যাতে সেই বাংলা গড়তে পারি, সেই প্রার্থনা করেছি।’’ শুক্রবার, অর্থাৎ ২৬ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিবস। তাঁকেও শ্রদ্ধা জানান শাহ।
সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারে অমিত শাহ।
গত সোমবার রাতে টানা দুর্যোগ-বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল কলকাতা। শহরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১০ জনের মৃত্যুও হয়। তা নিয়ে শাহ বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর আগে এখানে ভারী বর্ষণ হয়েছে। তার জেরে ১০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছে। আমি তাঁদের সকলের পরিবারকে সমবেদনা জানাই। আমি তাঁদেরও শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে চাই।’’ এ নিয়ে শাহকে পাল্টা জবাব দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘চার ঘণ্টায় যদি ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, কী করার থাকে? কিন্তু এখনকার অবস্থা দেখুন। কলকাতা যদি বানভাসি হয়ে থাকত, অমিত শাহ কি শহরের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারতেন?’’
পুজো উদ্বোধনে বেরোনোর আগে হোটেলে রাজ্যের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন শাহ। সেই বৈঠকে ছিলেন বাংলার কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল, রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরা।
কালীঘাট মন্দিরে অমিত শাহ।
বিজেপি সূত্রে খবর, নিউ টাউনের হোটেলে বঙ্গের বিজেপি নেতাদের নিয়ে সকাল ১০টা নাগাদ বৈঠক শুরু করেছিলেন সুনীল। পরে তাতে শাহ যোগ দেন। আগামী বিধানসভা ভোটকে নজরে রেখে এই বৈঠকে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংগঠনিক, নির্বাচন ও প্রচার সংক্রান্ত-সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কাজ দেখভালের জন্য রাজ্য বিজেপিতে আলাদা আলাদা দল গঠন করে দেওয়া হয়েছে। বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের এক একটি দলের মাথায় বসানো হয়েছে। বৈঠক হয়েছে আধ ঘণ্টা। তা সেরেই সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে পুজো উদ্বোধনের বেরোন শাহ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়, শুভেন্দু এবং শমীক। তবে বনসল এবং সুকান্ত হোটেলেই ছিলেন। তাঁরা সেখানে বৈঠক চালিয়ে গিয়েছিলেন।
শাহ প্রথমে গিয়েছিলেন সজলের পুজোয়। সেখানে ২০ মিনিট মতো ছিলেন। তার পর সেখান থেকে তিনি যান কালীঘাট মন্দিরে। সেখানে মিনিট কুড়ি মতো ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার পর তিনি যান ইজ়েডসিসি-তে। সেখানকার পুজো উদ্বোধন করে তিনি সোজা কলকাতা বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন। বিজেপি সূত্রে খবর, এ বার তাঁর গন্তব্য বিহার।