মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর মতো বিশ্বাসযোগ্য বিরোধিতা রাজ্য বিজেপি এখনও করতে পারছে না বলে বুধবার দলীয় বৈঠকে জানিয়ে দিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
দু’দিনের রাজ্য সফরে এ দিনই শহরে এসেছেন তিনি। সিপিএমকে হারাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে লড়াই করেছিলেন, তৃণমূলকে হঠাতে বিজেপি সেই রকম ‘বিশ্বাসযোগ্য’ লড়াই করতে পারছে কি— রাজ্য নেতাদের সামনে সেই প্রশ্ন তোলেন শাহ নিজেই। নেতাদের লড়াইয়ের ময়দানে আরও সময় দেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি। আজ, বৃহস্পতিবার তাঁর তারাপীঠ হয়ে পুরুলিয়া যাওয়ার কথা। সেখানে এক জনসভায় বঙ্গ বিজেপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানাতে পারেন তিনি।
এ দিন কলকাতায় নেমে বন্দরের অতিথিশালায় রাজ্য বিজেপির নির্বাচনী কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন অমিত। সেখানে রাজ্যের পরিস্থিতির কথা জানতে চাইলে, রাজ্য নেতারা সন্ত্রাস-খুনোখুনি, মিথ্যা মামলা, তৃণমূলের দুর্নীতি, গরু পাচার, কয়লা পাচার ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ তোলেন। কেন্দ্রীয় সরকার যাতে এ সবে আরও নজর দেয়, সেই প্রস্তাবও দেন কয়েকজন নেতা।
এ সব শুনে অমিত বৈঠকে বলেন, কয়লা চোর, গরু পাচারকারী, সন্ত্রাসী, গুণ্ডারা সব সময় শাসক দলের আশ্রয়ে থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী নেত্রী হিসেবে লড়াই করে তখনকার শাসককে হারিয়েছিলেন। তখন তো চোর-পাচারকারীরা ওঁর সঙ্গে ছিলেন না। মানুষ ভেবেছিলেন, সিপিএমকে মমতাই সরাতে পারেন। সেই বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে ওঠার পরই তিনি ক্ষমতায় এসেছেন। সর্বভারতীয় সভাপতি এর পর রাজ্য নেতাদের বলেন, ‘‘আগে নিজেদের দৃশ্যমান করে তুলতে হবে। মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। তবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে পারবেন।’’
নিজের কথা বলতে গিয়ে অমিত জানান, গত বছর তিনি ৯৩ দিন টানা আমদাবাদের বাইরে ছিলেন। ‘ভারত দর্শন’ কর্মসূচি নিয়ে সবকটি রাজ্য ঘুরেছিলেন। তখন বাড়িতে থাকা ছোট্ট নাতনির জন্য মনখারাপ হলেও তিন মাস তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। রাজ্য নেতাদের উদ্দেশে অমিতের প্রশ্ন, ক’দিন সংগঠনের বাইরে জেলায় রাত্রিবাস করেন? কারও কাছেই জুতসই জবাব না পেয়ে তিনি বলেন, অন্তত ১৫ দিন জেলায় কাটাতেই হবে। জোরদার আন্দোলনে নামতে হবে।
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোঝাপড়া নিয়ে যে প্রচার চলছে সে কথাও বৈঠকে উঠেছিল। অমিত তা নিয়েও বৈঠকে জানান, এ সবে কান দিয়ে লাভ নেই। প্রধানমন্ত্রী হয়েও নরেন্দ্র মোদী রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে যা মন্তব্য করেছেন, তা আগে কখনও কোনও প্রধানমন্ত্রী করেননি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনও বোঝাপড়ার মধ্যে নেই। সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।
রাজ্যের ১৫ জন নেতার মধ্যে ৩৭টি সাংগঠনিক জেলার কাজ ভাগ করে দিয়ে এখন থেকেই নেমে পড়ার পরামর্শ দেন তিনি। অন্তত ২২টি আসন জেতার জন্য পরিকল্পনা নেওয়ার কথাও ওঠে বৈঠকে। ঠিক হয়েছে, ৬টি রথ বের করে তিন পর্যায়ে ৪২টি লোকসভার প্রতিটি বুথে যাওয়া হবে। সঙ্গে তীব্র করা হবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারও। এ দিন হাওড়ার শরৎ সদনে সারা রাজ্যের সোশ্যাল মিডিয়া কর্মীদের সামনে বক্তব্য রাখেন শাহ। রাতে প্রায় ৩৫০ জন বিস্তারকের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই সবচেয়ে বেশি পূর্ণ সময়ের কর্মী নিয়োগ করেছে বিজেপি। তাঁদের দেওয়া হচ্ছে যাবতীয় রসদও। অমিত চান, বিস্তারকদের উপর ভর করেই বুথে প্রতিরোধ দেওয়ার মতো সংগঠন তৈরি হোক। তা হলে তৃণমূলকে হঠাতে বেশি কসরত করতে হবে না।
শাহর নির্দেশ শুনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘ঝাঁপিয়ে পড়ার কী আছে? পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াতে পারল না, কী ভাবে ২২টা আসন পাবে! আসলে এখানে দলের কেউ ঝাঁপাতে চাইছে না, তাই দিল্লি থেকে সভাপতি এসে ঝাঁপানোর কথা বলছেন। যে দু’টো আসন পেয়েছিল, দার্জিলিং আর আসানসোল তা-ও যাবে এ বার।’’