মারামারি দুই গোষ্ঠীর

দুর্নীতি ব্যুমেরাং এখন, অমিত কী বলবেন আজ

দলের সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরে এর আগে যখনই বাংলায় এসেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে উৎখাতের ডাক দিয়েছেন। কলকাতার ধর্মতলায় দাঁড়িয়েই হোক বা বর্ধমানে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁর দলের হাতিয়ার ছিল দুর্নীতি। সারদা-কাণ্ডকে অস্ত্র করেই এ রাজ্যে গেরুয়া জমি তৈরি করতে নেমেছিলেন অমিত শাহ। সঙ্গত করছিলেন সিদ্ধার্থনাথ সিংহেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৯
Share:

দলের সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরে এর আগে যখনই বাংলায় এসেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে উৎখাতের ডাক দিয়েছেন। কলকাতার ধর্মতলায় দাঁড়িয়েই হোক বা বর্ধমানে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁর দলের হাতিয়ার ছিল দুর্নীতি। সারদা-কাণ্ডকে অস্ত্র করেই এ রাজ্যে গেরুয়া জমি তৈরি করতে নেমেছিলেন অমিত শাহ। সঙ্গত করছিলেন সিদ্ধার্থনাথ সিংহেরা। কিন্তু আজ, সোমবার বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি যখন রাজ্যে আসছেন, তখন পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। অমিতের নিজের দলই এখন রাজ্যে রাজ্যে দুর্নীতির অভিযোগে বিব্রত! এই অবস্থায় রাজ্যে বিজেপি-কে চাঙ্গা করতে কোন দাওয়াই দেবেন অমিত, তা নিয়েই কৌতূহল তৈরি হয়েছে গেরুয়া শিবিরে।

Advertisement

এ বার অবশ্য অমিতের সফর-সূচিতে কোনও জনসভা নেই। তাঁর সফর পুরোদস্তুর সাংগঠনিক। হাওড়ার শরৎ সদনে আজ সকালে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আন্দামান, সিকিম ও ঝাড়খণ্ড— এই পাঁচ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের নিয়ে বৈঠক করার কথা সর্বভারতীয় সভাপতির। আলোচ্য, দলের ‘মহাসম্পর্ক অভিযান’। দলের কলেবর বাড়ানোর জন্য মিস্ড কল মারফত সদস্য সংগ্রহের অভিনব পদ্ধতি চালু করেছিলেন অমিতেরা। কিন্তু মিস্ড কলের তালিকা দেখে যাঁদের নাম বিজেপি-র খাতায় তোলা হয়েছে, তাঁরা আদৌ সংগঠনের কোনও কাজে আসছেন কি না, তা নিয়েই প্রবল সংশয় দেখা দিয়েছে! বিজেপি নেতৃত্ব তাই এখন চাইছেন সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গোটা বিষয়টি সরেজমিনে যাচাই করার পাশাপাশি দলের কর্মসূচিতে তাঁদের জড়িয়ে নিতে। এই অভিযান নিয়েই আজ আলোচনা করার কথা অমিতের।

সম্পর্ক অভিযানের হালহকিকত জানতে গিয়েই এর আগে বাংলায় সংগঠনের দুর্বলতার তথ্য পেয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন থেকে শুরু করে রামলালের মতো সাংগঠনিক নেতারা। এই দুর্বলতা কাটাতে সংগঠনের জন্য অমিত কী লক্ষ্য বেঁধে দেবেন, সেই দিকেই এখন তাকিয়ে রাজ্য বিজেপি-র নেতারা। অমিতের সঙ্গেই আজ প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে এ রাজ্যে বিজেপি-র বৈঠকে উপস্থিত হবেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক কৈলাস এখন এ রাজ্যে বিজেপি-র পর্যবেক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত। মধ্যপ্রদেশে ব্যপম-কাণ্ডের অনুসন্ধান করতে গিয়ে মৃত সাংবাদিক অক্ষয় সিংহকে ব্যঙ্গ করে বিতর্কে জড়িয়েই সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতায় নেমেছেন কৈলাস। নিজেরাই বিব্রত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের রাজ্য শাখাকে কী বার্তা দেবেন, তা নিয়ে স্বভাবতই নানা চর্চা চলছে!

Advertisement

এর মধ্যেই বিজেপি-র অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে হাওড়ায় দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা অধুনা সহ-পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহের উপস্থিতিতেই এ দিন সংঘর্ষে জড়িয়েছে দলের দুই গোষ্ঠী! গুরুতর জখম বিজেপি-র জেলা সম্পাদক মণিমোহন ভট্টাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ ঈশান পিল্লা। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে। মারামারি শুরু হতেই সিদ্ধার্থনাথকে অবশ্য দলীয় কর্মীরা সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফিরে আসতে হয় সিদ্ধার্থনাথকেই। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

দলীয় এক সূত্রের খবর, অমিতের আজকের কমর্সূচির জন্য এ দিন হাওড়া স্টেডিয়ামে প্রস্তুতি-সভা ছিল। সেখানে সিদ্ধার্থনাথ ছাড়াও দীননাথ ঘোষ, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায় এবং বিজেপি-র জেলা সভাপতি তুষার দাস ও অন্যা নেতারা ছিলেন। সভায় জেলা যুব মোর্চার সভাপতি উমেশ রাই এবং সংগঠনের কর্মাধ্যক্ষ সঞ্জয় সিংহ শ’দেড়েক অনুগামীদের নিয়ে আসেন। দীর্ঘদিন তুষারবাবুর অনুগামীদের সঙ্গে উমেশ-গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব চলছে। তাঁদের অনুগামীদের উপস্থিতি নিয়ে তুষারবাবুরা প্রশ্ন তুলতেই হট্টগোল শুরু হয়। তুষারবাবুর অভিযোগ, ‘‘গালিগালাজের পরে আমাদের মারধর করা হয়।’’ মণিময়বাবুর মুখ ফেটে রক্ত ঝরে। ঈশানবাবু বুকে চোট পান। রাজ্য বিজেপি-র নেতা রীতেশ তিওয়ারি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘এই ঘটনা সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না।’’ তবে তুষারবাবু জানান, গোটা ঘটনা তিনি দলের সর্বভারতীয় সভাপতিকে ফ্যাক্স করেছেন। প্রস্তুতি-সভার আগে শরৎ সদনে সিদ্ধার্থনাথ দাবি করেন, ‘‘বিশ্বের সব থেকে শক্তিশালী দল আমাদের। আমাদের সদস্য প্রায় ১১ কোটি। সংগঠন যথেষ্ট মজবুত।’’ তার এক ঘণ্টার মধ্যেই হাওড়া স্টেডিয়ামে ওই ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন