জাল নোটের মামলায় বয়সও জাল!

পুরোটাই জাল!এমনিতে জাল নোটের মামলা। তবে তদন্তে নেমে অন্য একটি জালিয়াতিরও সন্ধান পেলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। যেখানে মামলার এক অভিযুক্ত বয়স ভাঁড়িয়ে নিজেকে নাবালক প্রতিপন্ন করে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে জেনেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:০৪
Share:

পুরোটাই জাল!

Advertisement

এমনিতে জাল নোটের মামলা। তবে তদন্তে নেমে অন্য একটি জালিয়াতিরও সন্ধান পেলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। যেখানে মামলার এক অভিযুক্ত বয়স ভাঁড়িয়ে নিজেকে নাবালক প্রতিপন্ন করে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে জেনেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। আসল বয়স যা, তার চেয়ে চার বছর তিন মাস বয়স কমিয়েছিল অভিযুক্ত, এমনই জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা।

কলকাতার জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে সেই সব নথিপত্র পেশ করেছে এনআইএ। ১৮ এপ্রিল শুনানি হওয়ার কথা। এনআইএ-র বিশেষ কৌঁসুলি দেবাশিস মল্লিক চৌধুরী জানান, জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড অভিযুক্তকে সাবালক বলে জানালে এনআইএ তাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করবে।

Advertisement

এনআইএ সূত্রের খবর, ওই অভিযুক্তের নাম নাসির শেখ। তার বাড়ি বৈষ্ণবনগরের মহম্মদপুরে। বয়সের প্রমাণ হিসেবে মালদহের শাম মহম্মদ হাইমাদ্রাসার লেটারহেডে লেখা, প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আলির স্বাক্ষরিত শংসাপত্র দাখিল করেছিল সে। তাতে তার জন্ম-তারিখ ২৯ জুলাই, ১৯৯৮।

নাসির এবং তার সহযোগী তাজেল শেখ গত বছর ৩১ মার্চ মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পাঁচশো ও হাজারের নোটে ন’লক্ষ ৮০ হাজার টাকার জাল নোট পাওয়া যায় তাদের কাছে। হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের দেওয়া শংসাপত্র অনুযায়ী নাসির যখন গ্রেফতার হয়, তখন তার বয়স ১৮ বছরের কম। তাই বৈষ্ণবনগরের ওই মামলা (কেস নম্বর ২১৯/২০১৬)-য় তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে হাজির করানো হয়। বোর্ড তাকে পাঠায় সরকারি হোমে। পুলিশ তাকে জেরা করতে পারেনি।

পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে ওই মামলা এনআইএ-র হাতে যায়। জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে হাজিরা দেওয়া নাসিরের চেহারা দেখে তার বয়স নিয়ে গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়। নাসির শেখ নাম ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে তাঁরা একটি সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের সন্ধান পান। সেই ভোটার পরিচয়পত্রে দেওয়া ছবির সঙ্গে মিলে যায় অভিযুক্তের ছবি। কিন্তু তাতে জন্ম-তারিখ লেখা, ১৯৯৪-এর ১০ এপ্রিল। সে-ক্ষেত্রে জাল নোট-সহ ধরা পড়ার সময়ে নাসিরের বয়স দাঁড়ায় প্রায় ২২ বছর। বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক না-হলে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র পাওয়ার কথাই নয়। নির্বাচন কমিশন নাসিরের বয়স সংক্রান্ত তথ্য কোথায় পেয়েছে, তা জানতে চায় এনআইএ। কমিশন তাদের জানায়, বৈষ্ণবনগরের মহম্মদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেওয়া শংসাপত্র থেকে তারা নাসির সম্পর্কে ওই তথ্য পেয়েছে। গোয়েন্দারা স্কুলের রেজিস্টার থেকে জানতে পারেন, ওই তথ্য ঠিক এবং নাসির ওই স্কুলেরই ছাত্র ছিল।

নাসির যে-শংসাপত্র দেখিয়ে নিজেকে নাবালক সাব্যস্ত করতে চাইছিল, সেটি তাকে দেন শাম মহম্মদ হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আলি। এনআইএ-র দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ওই প্রধান শিক্ষক স্বীকার করেছেন, কোনও নথিপত্র ছাড়াই, শুধু মুখের কথার ভিত্তিতে তিনি ও-রকম লিখে দিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement