Love marriage

ভালবেসে বিয়ে করছেন অ্যাসিড-আক্রান্ত মমতা

তেহট্টের বিনোদনগরের মেয়ে মমতা সরকার। বর্তমানে তিনি তেহট্টের মহকুমা কার্যালয়ে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে চাকরি করেন। ১০ মার্চ নিজের বাড়িতে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছেন অ্যসিড-আক্রান্ত মমতা।

Advertisement

সাগর হালদার

তেহট্ট শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৪১
Share:

হবু স্বামীর সঙ্গে মমতা। নিজস্ব চিত্র

১০ মার্চ বিয়ে করছেন তেহট্টের অ্যাসিড-আক্রান্ত মেয়ে মমতা সরকার। নিজের পছন্দের মানুষের সঙ্গে শুরু করতে চলেছেন জীবনের নতুন অধ্যায়। অ্যসিড-আক্রান্ত হয়েও সমাজের আর পাঁচটা মেয়ের মতোই যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যায়, তা নিজেকে পদে পদে এত দিন বিশ্বাস করিয়েছেন মমতা। এ বার বিশ্বাস করতে শেখাচ্ছেন এই সমাজকেও।

Advertisement

তেহট্টের বিনোদনগরের মেয়ে মমতা সরকার। বর্তমানে তিনি তেহট্টের মহকুমা কার্যালয়ে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে চাকরি করেন। ১০ মার্চ নিজের বাড়িতে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছেন অ্যসিড-আক্রান্ত মমতা। উত্তরাখণ্ডের দেহরাদুনের ছেলে লাকি সিং-এর সঙ্গে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিয়ে করতে চলেছেন তিনি।

২০০৪ সালের ১৯ এপ্রিল পারিবারিক অশান্তির জেরে মমতার এক আত্মীয় তাঁর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারে। অসুস্থ হয়ে পড়েন মমতা। দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলে তাঁর। সে সময়ে তিনি সবেমাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। ওই ঘটনার পর আর পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি। চেহারার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের চেনা স্বপ্নগুলোও বদলে যায় অনেকটা। এ দিন মমতা বলেন, ‘‘মুখের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। প্রথম কয়েক বছর চোখ নিয়ে সমস্যা ছিল। এখন কিছুটা ভাল।’’

Advertisement

তবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা বরাবর ছিল। ২০০৯ সালে নিজের মনকে বুঝিয়ে ফের পড়াশোনা শুরুর সিদ্ধান্ত নেন মমতা। ২০১০ সালে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। এর পর দুর্গাপুরে একটি সংস্থায় চাকরি পান। সেখানে বেশ কিছু বছর কাটান। সেখানেই দেখা হয় লাকি সিংয়ের সঙ্গে।

অ্যাসিড-আক্রান্ত ক্ষত-বিক্ষত মুখ নিয়ে হীনম্মন্যতা কাটিয়ে উঠতে সময় লেগেছিল মমতারও। মমতার বয়ানে, ‘‘আমরা বন্ধুর মতো ছিলাম। লাকি এক সময়ে আমায় বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি রাজি হইনি। ভেবেছিলাম ছেলেটা আমার সঙ্গে খুশি থাকতে পারবে না। এ ছাড়াও যেহেতু ছেলেটিকে আমি প্রথমে চিনতাম না, তাই প্রথমে বিয়েতে রাজি হইনি। কিন্তু পরে আমরা দু’জন দু’জনকে বুঝেছি। তার পর বিয়ের জন্য রাজি হই।’’ এই বিয়েতে মমতার বাবা, মা, দাদা সকলেই সম্মতি জানিয়েছেন। মমতার বাবা প্রফুল্ল সরকার ও মা অবলা সরকার এ দিন বলেন, ‘‘মেয়ে এখন নিজেকে সামলে নিয়ে সমাজে একা চলার মতো পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে।’’ ২০১৭ সালে বাড়ি ফেরেন মমতা। স্থানীয় এলাকায় কাজের খোঁজ শুরু করেন। অবশেষে তেহট্ট মহকুমা দফতরে কাজ মেলে। মমতা বর্তমানে সেখানেই কর্মরত। বিয়ের পর লাকি ও মমতার কৃষ্ণনগরেই একসঙ্গে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে।

যদিও এই সম্পর্ক মানতে চায়নি লাকির পরিবার। এ দিন ফোনে লাকি বলেন, ‘‘আমাদের তিন বছরের প্রেম। এই সম্পর্কের কথা বাড়িতে জানানো হলে আমার মা-বাবা মেনে নিতে চাননি। ওঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন মমতাকে বিয়ে করলে পরিবারের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখা যাবে না।’’ কিন্তু এত কিছুর পরেও মমতার হাত ছেড়ে যেতে নারাজ লাকি। মুখে শুধু বলেন— ‘‘আমি মমতাকে বিয়ে করে সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই।’’

২০০৪ সালে পারিবারিক অশান্তির জেরে পরিবারেরই এক আত্মীয় রাজদুলাল সরকার জমি-সংক্রান্ত বিবাদের জেরে মমতার মুখে অ্যাসিড ছোড়ে বলে অভিযোগ। তার নামে থানায় অভিযোগ করা হয়। ছ’মাস জেল খেটে বর্তমানে সে জামিনে মুক্ত।

বর্তমানে ওই আত্মীয় বিনোদনগরে থাকে না। কিন্তু যখনই এলাকায় ফিরে আসে, ভয়ে ভয়ে থাকেন মমতা। বিয়ের প্রস্তুতির আনন্দের মধ্যেও তাই একটা কাটা খচখচ করছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন