এই বিজ্ঞাপন ঘিরেই বিতর্ক।
ফুটফুটে দু’টি শিশু। বয়স বড়জোর দুই বা আড়াই। শিশুপুত্রের মাথায় টোপর। শিশুকন্যার পরনে লাল পাড় হলুদ শাড়ি, গায়ে হলুদের ছোপ। দু’জনেরই মাথা থেকে পা পর্যন্ত গয়নায় মোড়া। ছেলেটির পাশে গামছা আর মেয়েটির সামনে কলাগাছ।
কোনও সিনেমার দৃশ্য নয়। একটি গয়না সংস্থার সাম্প্রতিকতম বিজ্ঞাপন এটা। তবে সিনেমার মতোই শহর ছাড়িয়ে সেটা ছড়িয়ে পড়েছে জেলায় জেলায়। ওই বিজ্ঞাপনে বাল্য বিবাহে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার সংস্থাটির শো-কজ বা কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইট’ বা রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ।
কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী জানান, গয়না সংস্থার বিজ্ঞাপনটিতে খুব স্পষ্ট ভাবেই বর-কনে সাজানো হয়েছে শিশু দু’টিকে। প্রভূত গয়না পরিয়ে তাদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে— এমনটাই দেখানো হয়েছে। অনন্যা বলেন, ‘‘বিজ্ঞাপনের ছবিটির মাধ্যমে বাল্য বিবাহে ইন্ধন জোগানো হচ্ছে। যা শিশু সুরক্ষা আইনের পরিপন্থী। বস্তুত বিজ্ঞাপনটি ওই আইন অমান্য করছে। এই কথা জানিয়েই সংস্থাটির কাছে শো-কজ নোটিস পাঠিয়েছি আমরা।’’
তবে গয়না সংস্থার কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা এখনও শো-কজের কথা জানেন না। তবে অভিযোগের কথা শুনে তাঁদের যুক্তি, ছবিতে বাচ্চা দু’টির বিয়ে নয়, অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান দেখানো হয়েছে। কিন্তু অন্নপ্রাশনের শিশুর বয়স তো ছ’সাত মাস মাসের বেশি হওয়ার কথা নয়? প্রশ্ন শুনে সংস্থার গোল পার্ক শাখার ম্যানেজার জগদানন্দ মণ্ডল জানান, অত ছোট বাচ্চাকে দিয়ে গয়না পরিয়ে বিজ্ঞাপন করানো মুশকিল। তাই একটু বড় শিশুকে দেখানো হয়েছে। তবে ওটা অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানই বোঝানো হয়েছে। ‘‘বিজ্ঞাপনটা আসলে তৈরি করা হয়েছে শিশুদের জন্য গয়নার সম্ভার বোঝাতে। ছবিতেও সেটাই তুলে ধরা হয়েছে। ‘দুষ্টুমিষ্টি কালেকশন’ ট্যাগলাইনটা রাখা হয়েছে সেই জন্যই,’’ বলেন জগদানন্দবাবু।
শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন অবশ্য এই যুক্তি মানতে রাজি নয়। তাদের বক্তব্য, গামছা, কলাগাছ, হলুদের ছাপ— এগুলো অন্নপ্রাশন নয়, বিয়েরই ইঙ্গিত দেয়। অনন্যাদেবী বলেন, ‘‘অন্নপ্রাশনের গল্প বলে বিষয়টিকে লঘু করার চেষ্টা করে কোনও লাভ নেই। বিজ্ঞাপনটি বাল্য বিবাহের মতো একটি সংবেদনশীল বিষয়ে আঘাত করেছে। ওই অলঙ্কার সংস্থার আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। এই ধরনের দৃশ্য ছাড়া আরও অনেক ভাবেই শিশুদের জন্য গয়নার বিজ্ঞাপন দেওয়া যেতে পারে।’’