শেখ সমীর
হেরোইন এনে দেননি। মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধী যুবকটির এই ছিল ‘অপরাধ’। সেই কারণে খুন হতে হলো তাঁকে। খুনের অভিযোগে চুঁচুড়ার পাঙ্খাটুলি এলাকার এক দুষ্কৃতীকে পিটিয়ে মারল জনতা।
শুক্রবার সকালে পাঙ্খাটুলির বিবির গলি এলাকার বাসিন্দা শেখ সমীর (২৫) নামে ওই প্রতিবন্ধী যুবকটির দেহ মেলে সেখানকারই একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। তার পরেই জনরোষ গিয়ে পড়ে শেখ পটল (৩৫) নামে এলাকার ওই দুষ্কৃতীর উপরে। বৃহস্পতিবার, কালীপুজোর রাতে অনেকেই দেখেছিলেন, সমীরকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পটল। গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। ওই দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে বছর দশেক আগে হেরোইন খাইয়ে সমীরের মাসতুতো ভাইকেও খুনের অভিযোগ তো রয়েছেই, তা ছাড়া চুরি, ছিনতাই-সহ নানা অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ অনেকবার তাকে গ্রেফতারও করেছে। এ দিন মারের সময় পটল খুনের কথা কবুল করে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের।
এখানেই শেষ নয়। পটলের দেহ একটি পুকুরে ফেলে দিয়ে জনতা এর পরে এলাকায় মাদক-ব্যবসা চালানোর অভিযোগে তিনটি দোকান ও দু’টি বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। মহিলা এবং শিশুরাও লাঠি-বাঁশ হাতে রাস্তায় নেমে এসেছিল। পুলিশ গেলে বিক্ষোভের মুখে পড়ে। এলাকায় মাদক-ব্যবসা বন্ধের দাবি ওঠে।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হলেও হুগলি শিল্পাঞ্চলে অপরাধমূলক কাজকর্মে লাগাম পড়েনি। তা নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। চুঁচুড়ার অনেকেই বলছেন, দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত পুলিশ যেমন থামাতে পারছে না, তেমনই মাদক-কারবারও রুখতে পারছে কই? বৃহস্পতিবার রাতে আবার পাশের শহর চন্দননগরে জুয়ার আসর থেকে ফেরার পথে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার পীযুষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘চুঁচুড়ায় গণপিটুনিতে জড়িত অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চন্দননগরের ঘটনাটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঙ্খাটুলিতেই একটি চায়ের দোকানে কাজ করতেন সমীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে খাওয়া সেরে পাড়ার কালীপুজোর মণ্ডপে বসেছিলেন। বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন, রাতে পুজো দেখে ফিরবেন। ওই সন্ধ্যায় পটল সেখানে গিয়ে তাকে হেরোইন কিনে এনে দেওয়ার জন্য বলে। সমীর রাজি হননি। পটল তখন ফিরে গেলেও রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ফিরে আসে। সমীরকে টেনে মণ্ডপের বাইরে নিয়ে যায়। রাতে সমীর না-ফেরায় বাড়ির লোকজন খোঁজ শুরু করেন। শুক্রবার ভোরে এলাকার পরিত্যক্ত বাড়িতে সমীরের দেহ পড়ে থাকতে দেখেন কয়েক জন। তার পরেই তাঁকে খুনের কথা জানাজানি হয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে এ দিন দুপুরে পুলিশ দেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়।
সমীরের মুখে রক্তের দাগ দেখে তদন্তকারীদের ধারণা, শ্বাসরোধ করে খুনের আগে সমীরকে বেধড়ক মারধরও করা হয়। সমীরের মা আনোয়ারা বিবি বলেন, ‘‘মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় ছেলেটাকে দূরে যেতে দিতাম না। বাড়ির কাছেই যে ওকে এ ভাবে মেরে ফেলবে, ভাবতে পারছি না।’’ এলাকার এক যুবক বলেন, ‘‘ওর সঙ্গে অনেকেই মস্করা করত। কালীপুজোর রাতে আমরা ভেবেছিলাম, পটলও বোধহয় মস্করা করতেই ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পটল যে খুন করবে ভাবিনি। তা হলে তখনই ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’’