—ফাইল চিত্র।
আদালত তাঁকে হাজির হতে বলেছিল আগামী মঙ্গলবার। কিন্তু, নির্ধারিত দিনের প্রায় এক সপ্তাহ আগেই সোমবার সকালে সিউড়ির মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে হাজিরা দিলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সম্পাদক অনুব্রত মণ্ডল। শুধু হাজিরা নয়, এ দিন সিজেএম ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে তাঁর ‘আত্মসমর্পণ মূলক’ জামিনও মঞ্জুর হয়। এই সিজেএম-ই গত সপ্তাহে অনুব্রতকে আগামী ৭ জুলাই আদালতে হারির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ আদালত চত্বরে পৌঁছন অনুব্রত। আদালতে আগেই তাঁর হয়ে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন আইনজীবী মৃদুল দে। এজলাস শুরু হতেই গেরুয়া পাঞ্জাবি পরা অনুব্রত কাঠগড়ার কাছে এগিয়ে যান। তারই মধ্যে বিচারক তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। গোটা প্রক্রিয়াটি মিনিট দশেকের মধ্যে সম্পন্ন হয়। এত কম সময়ের মধ্যে জামিন মঞ্জুর হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এমনকী, তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেননি সরকারি আইনজীবী কুন্তল চট্টোপাধ্যায়। কেন? তিনি বলেন, ‘‘যেটুকু যা করার করেছি। যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে গত ২৪ জুন চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি আদালতের গ্রহণযোগ্যতায় এসেছিল। এ দিন আদালতে হাজির হয়ে অনুব্রত জামিনের আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করেছে।’’
আইনজীবীদের ব্যাখ্যা, যে হেতু আদালত তাঁকে আগামী ৭ জুলাই হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, ওই দিন হাজিরা না দিলে আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারত। কিন্তু, ‘আত্মসমর্পণ মূলক’ জামিন মেলায় অনুব্রতর আর সেই ঝুঁকি থাকছে না। এক হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে এ দিন জামিন মেলে বীরভূমের ওই তৃণমূল নেতার।
২০১৩-য় পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে পুলিশের উপরে ‘বোম’ মারা এবং নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন অনুব্রত। পাড়ুইয়ের কসবায় প্রকাশ্য সভায় ওই বক্তৃতার পরেই স্থানীয় একাধিক নির্দল প্রার্থীর বাড়িতে হামলা হয়। হয় বোমাবাজিও। এক নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগরচন্দ্র ঘোষকে বাড়িতেই গুলি করা হয়। পরে তিনি হাসপাতালে মারা যান। এই ঘটনায় অনুব্রত-সহ ৪১ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন নিহতের পুত্রবধূ।
অনুব্রতর ওই বক্তৃতা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তুমুল হইচই হয়। বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হওয়ার পরও অনুব্রতের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি পুলিশ। তবে, দু’বছর ধরে সেই ঘটনার তদন্ত করে গত ২৪ জুন সিজেএম ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয় পুলিশ। আগামী ৭ জুলাই তাঁর এজলাসে অনুব্রতকে হাজির হওয়ার নির্দেশও দেন সিজেএম। এমনকী, অনুব্রতর কণ্ঠস্বর পরীক্ষার রিপোর্টও আদালতে জমা পড়ে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, চূড়ান্ত রিপোর্টে অনুব্রতর বিরুদ্ধে ১৮৯, ৫০৫/১বি এবং ৫০৬ ধারায় মামলা হয়েছে। এই তিনটিই জামিনযোগ্য এবং আদালতের ধর্তব্যযোগ্য নয়। চূড়ান্ত রিপোর্টে লঘু ধারায় মামলা হওয়ায় এ দিন জামিন পেতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি তাঁকে।