Anubrata Mondal

কেষ্টর বাঁশি কাড়লেন মমতা! বীরভূমে তুলে দেওয়া হল জেলা সভাপতি পদই, জেলার সার্বিক দায়িত্ব ন’জনের কোর কমিটিকে

শুক্রবার দলের জেলা সভাপতি এবং চেয়ারপার্সনদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তৃণমূল, তাতেই স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে, জেলায় দলের সংগঠন দেখভাল করবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি করে দেওয়া কোর কমিটিই।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৫ ১৭:৩৭
Share:

অনুব্রত মণ্ডলকে বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতি পদ থেকে সরানো হল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আর বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি রইলেন না অনুব্রত মণ্ডল। শুধু তা-ই নয়, ওই জেলায় জেলা সভাপতি পদই আর রাখল না শাসকদল। তা তুলে দেওয়া হল।

Advertisement

শুক্রবার দলের জেলা সভাপতি এবং চেয়ারপার্সনদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তৃণমূল, তাতেই স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে, জেলায় দলের সংগঠন দেখভাল করবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি করে দেওয়া কোর কমিটিই। ন’সদস্যের ওই কমিটিতে অবশ্য অনুব্রত রয়েছেন। তবে জেলায় দলের চেয়ারপার্সন পদটি অক্ষুণ্ণই রয়েছে। ওই পদে রয়েছেন রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার ডট কম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তাতে লেখা হয়েছিল যে, জেলা তৃণমূলের অন্দরের অনেকেই মনে করছেন, মমতার গড়ে দেওয়া কোর কমিটিকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করে দিয়ে ‘অপারেশন বোলপুর’ চালাচ্ছেন অনুব্রত। গত দেড় মাস জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি। সমান্তরাল ভাবে কেষ্ট তাঁর পারিষদদের নিয়ে ব্লকে ব্লকে কর্মসূচি করে ২০২৬ সালের ভোটের নান্দীমুখ সেরে রাখছেন। অনুব্রতের সেই কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখছেন কোর কমিটির অন্যতম সদস্য তথা বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। ঘটনাচক্রে, সেই খবর প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরেই বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদই তুলে দিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

গরুপাচার মামলায় ২০২২ সালে অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরেই বীরভূমে কোর কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা। কমিটিতে রেখেছিলেন কাজলকে, যাঁর সঙ্গে কেষ্টর ‘মধুর’ সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। কিন্তু অনুব্রতের গ্রেফতারির পরেও জেলায় দলের জেলা সভাপতি পদ ছিল। ওই পদে বহালও ছিলেন অনুব্রত। পরে যখন তিনি জেল থেকে ছাড়া পান, আলাদা করে তাঁকে ওই পদে বসানোরও কোনও বিষয় ছিল না। জেলা সভাপতি হওয়ার সুবাদে কোর কমিটিতেও তাঁর অন্তর্ভুক্তি ঘটে। তবে দলনেত্রী মমতা বার বার কড়া নির্দেশ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোর কমিটির সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কেষ্টকে দল চালাতে হবে। কিন্তু তার পরেও অনুব্রত যে ভাবে কোর কমিটিকে এড়িয়ে কাজ করছিলেন, তাতে জেলার নেতাদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ে। দলীয় সূত্রে দাবি, সেই সব খবরাখবর শীর্ষ নেতৃত্বের কানে গিয়েছিল। এ বার জেলা সভাপতি পদটাই তুলে দিয়ে কড়া বার্তা দিল দল।

দলের একটি অংশের দাবি, অনুব্রত জেলে থাকাকালীন লোকসভা ভোটে বীরভূমে ভালই সাফল্য পেয়েছে দল। কোর কমিটিই সংগঠন পরিচালনা করে দলকে জেলার দু’টি আসনেই জিতিয়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে যে দুবরাজপুরে বিজেপি জিতেছিল, সেখানেও দল লিড পেয়েছে। ফলে কেষ্ট ছাড়াও যে জেলায় দলের পক্ষে জেতা সম্ভব, তা দল জানে।

যদিও কেষ্ট-ঘনিষ্ঠদের দাবি, কেষ্টর সাজানো সংগঠনের উপরে দাঁড়িয়েই লোকসভায় ভাল ফল করেছিল দল।

সভাপতি পদে বদল হাওড়া সদরে। কল্যাণ ঘোষকে সরিয়ে গৌতম চৌধুরীকে সভাপতি করা হয়েছে। চেয়ারম্যান হিসেবে লগনদেও সিংহয়ের পরিবর্তে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায়কে করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদের বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান পরিবর্তন হয়েছে। রবিউল আলম চৌধুরীর পরিবর্তে নিয়ামত শেখ নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন।

বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর দুই সাংগঠনিক জেলাতেই বদলে ফেলা হল সভাপতি। বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদ থেকে সরানো হল বাঁকুড়ার সাংসদ অরুপ চক্রবর্তীকে।দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারাশঙ্কর রায়কে। তারাশঙ্কর এত দিন বাঁকুড়ার তালড্যাংড়া ব্লকের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘দল দায়িত্ব দিয়েছে। আগামী দিনে আমি সকলকে নিয়ে চলব। বিধানসভা নির্বাচনে সব ক’টি আসনে জয়লাভই আমাদের লক্ষ্য।’’ বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলাতেও জেলা সভাপতি পদে রদবদল করা হল। সভাপতি পদ থেকে বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হল সুব্রত দত্তকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement