Anubrata Mondal

‘আপকো হিন্দি নেহি আতি?’ অনুব্রতের উত্তর, ‘নাহি’, শুনানি শেষে অ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার করে এল বার্গার

ইডি সূত্রের খবর, খাওয়াদাওয়ার দিক থেকেও অনুব্রতের আপ্যায়নে ত্রুটি হচ্ছে না। তাঁকে পছন্দমতো ডাল, আলুপোস্ত, মাছের ঝোল, ভাত জোগানো হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৩ ০৭:২৭
Share:

দিল্লির বিশেষ সিবিআই কোর্ট চত্বরে অনুব্রত। নিজস্ব চিত্র

‘আপকো হিন্দি নহি আতি?’

Advertisement

বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রঘুবীর সিংহের প্রশ্ন শুনে অনুব্রত মণ্ডল উত্তর দিলেন, ‘নহি!’

বিচারক প্রশ্ন করলেন, ‘আপকো স্রিফ বাংলা আতি হ্যায়?’ অনুব্রত উত্তর দিলেন, ‘‘হ্যাঁ।’’

Advertisement

ইডি-র আইনজীবী নীতেশ রানা রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে যুক্তি দিচ্ছিলেন, গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডল হিন্দি, ইংরেজি কিছুই বোঝেন না। শুধুই বাংলা বোঝেন। তিনি লিখতেও পারেন না। তাই জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। এ দিকে বিচারকের হিন্দিতে প্রশ্ন শুনে অনুব্রত উত্তর দেওয়ায় এজলাসে সকলেই মুচকি হাসলেন। তড়িঘড়ি তাঁর আইনজীবী মুদিত জৈন উত্তর দিলেন, ‘‘আমি অবাঙালি হলেও এ টুকু বাংলা বুঝি।’’

আসানসোল জেল থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লিতে নিয়ে আসার পর দোলের দিন তাঁকে বিচারকের বাড়িতে হাজির করা হয়েছিল। প্রথম দফায় তিন দিনের হেফাজত শেষে অনুব্রতকে এই প্রথম বিচারক রঘুবীর সিংহের সামনে হাজির করা হল। যিনি তাঁকে দিল্লিতে হাজির করার পরোয়ানা জারি করেছিলেন। ঘণ্টাখানেক ধরে তাঁর ও ইডি-র আইনজীবীর বাদানুবাদ চলল। অনুব্রত পাটভাঙা হাফহাতা পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা ও হাওয়াই চপ্পল পরে বসে রইলেন। অধিকাংশ সময়ই ঝিমোলেন। শুনানির শেষে বিচারক তাঁকে সামনে নিয়ে আসতে বলেছেন। তাঁর শরীর ঠিক রয়েছে কি না জানতে চেয়েছেন। অনুব্রত বুঝতে না পেরে পাশে ইডি-র বাঙালি অফিসারের দিকে তাকিয়েছেন। বিচারকের নির্দেশে তাঁর বাঙালি আইনজীবী সম্পৃক্তা ঘোষাল অনুব্রতের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছেন, ওঁর কোনও শারীরিক সমস্যা হচ্ছে না। ইডি-র আইনজীবী রানা বলেছেন, অনুব্রত ‘ফিট অ্যাজ় এ ফিডল’ এবং ‘হেল অ্যান্ড হার্টি’ রয়েছেন।

ইডি সূত্রের খবর, খাওয়াদাওয়ার দিক থেকেও অনুব্রতের আপ্যায়নে ত্রুটি হচ্ছে না। তাঁকে পছন্দমতো ডাল, আলুপোস্ত, মাছের ঝোল, ভাত জোগানো হচ্ছে। শুক্রবার সকালে টোস্ট, কফি খেয়েছেন। দুপুরে আদালতে রওনা হওয়ার আগে ইডি-র দফতরে মাছ-ভাত খেয়েই বেরিয়েছেন। শুনানির শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষার সময়ও ইডি-র অফিসাররা তাঁকে অ্যাপ-এর মাধ্যমে অর্ডার করে বার্গার, কোল্ড কফি আনিয়ে খাইয়েছেন। রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে তাঁকে ডাক্তাররাও ‘ফিট’ বলে জানিয়েছেন। অনুব্রত ফিসচুলার যন্ত্রণার কথা জানিয়েছেন। ডাক্তার জানিয়েছেন, আপাতত ওষুধ খেলেই হবে। প্রয়োজনে পরে অস্ত্রোপচারের কথা ভাবা যাবে।

দিল্লিতে ‘প্রবর্তন ভবন’-এ ইডি-র সদর দফতরে অনুব্রতের ঠিকানা আপাতত এক জনের শোয়ার মতো বিছানা-সহ ছোট্ট ঘর। সঙ্গে ছোট্ট শৌচালয়। ওই ঘরের পাশের অফিসেই ইডির দুই অফিসার অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। সঙ্গে অনুব্রতের দোভাষী হিসেবে কাজ করার জন্য ব্যাঙ্কের এক জন অফিসারকে নিয়ে আসা হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে আরও ১১ দিনের জন্য অনুব্রত মণ্ডলকে যখন রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট থেকে ইডি-র দফতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন আদালতের বাইরে ভিড় উপচে পড়েছে। কারণ, ওই সময়েই আদালতে দিল্লির সদ্যপ্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াকে হাজির করা হয়েছে। কিছু ক্ষণ পরে সিসৌদিয়ারও ইডি-র হেফাজতে একই বাড়িতে স্থান হবে। অনুব্রত অবশ্য উদাসীন। তিনি কনস্টেবলের কাঁধে হাত দিয়ে হেঁটে গাড়ি রাখার জায়গায় পৌঁছেছেন। গাড়ির জন্য অপেক্ষার কয়েক মিনিট পাঁচিলে বসে বিশ্রাম নিয়েছেন। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না জানতে চাওয়ায় উত্তর দিয়েছেন, ‘‘আমার তো শ্বাসকষ্ট রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন