অনুব্রতের গাড়ির মাথায় লাল আলো ঘিরে বিতর্ক

দুপুরের খোলা বাতি বিকেলে পড়ল ঢাকা

রবিবার নির্বাচন কমিশন লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করার পরেই দেশে চালু হয়ে গিয়েছে আদর্শ নির্বাচনী বিধি। বৃহস্পতিবার বোলপুর ডাকবাংলো ময়দানে বীরভূম জেলা তৃণমূলের কর্মী সম্মেলন অনুব্রত মণ্ডলকে আসতে দেখা যায় লাল বাতি লাগানো গাড়িতে চেপে। লাল বাতি অবশ্য জ্বলছিল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর ও লাভপুর শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ০০:৩৯
Share:

নজরে: বোলপুরে দলীয় কর্মী সম্মেলনে অনুব্রত মণ্ডলের গাড়িতে লালবাতি। (ডান দিকে) লাভপুরে ঢাকা হল সেই আলো। নিজস্ব চিত্র

দুপুরে বোলপুরে দলের কর্মী সম্মেলনে তিনি গিয়েছিলেন লাল বাতি লাগানো গাড়িতে। যা নিয়ে শুরু হয়েছিল বিতর্ক। বিকেলে লাভপুরের কর্মিসভায় যাওয়ার সময় সেই লাল বাতিই ঢাকা পড়ে গেল জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের গাড়িতে!

Advertisement

রবিবার নির্বাচন কমিশন লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করার পরেই দেশে চালু হয়ে গিয়েছে আদর্শ নির্বাচনী বিধি। বৃহস্পতিবার বোলপুর ডাকবাংলো ময়দানে বীরভূম জেলা তৃণমূলের কর্মী সম্মেলন অনুব্রত মণ্ডলকে আসতে দেখা যায় লাল বাতি লাগানো গাড়িতে চেপে। লাল বাতি অবশ্য জ্বলছিল না। বিরোধীদের দাবি, না জ্বললেও লাল বাতি লাগিয়ে রাখাটাই নির্বাচনী বিধিভঙ্গ। প্রশ্নের জবাবে অনুব্রত প্রথমে বলেছিলেন, ‘‘আমার গাড়িতে লাল বাতি জ্বলেনি।’’ কিন্তু, গাড়িতে লাল বাতি লাগানো কেন, সে প্রশ্নে তাঁর জবাব ছিল, ‘‘নির্বাচনী নিয়ম কানুন আমি ভালই জানি। আমার গাড়িতে লালবাতি থাকতেই পারে!’’ পরে এ দিনই বিকেলে অবশ্য লাভপুর স্কুলমাঠের কর্মিসভায় তাঁকে গাড়ির লালবাতি ঢেকে দিয়ে আসতে দেখা যায়। নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ অনুব্রতের বিরুদ্ধে এই প্রথম নয়।

সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী, লাল বাতি লাগা গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী, বিধানসভার স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলনেতা, মুখ্যসচিব, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি-সহ হাতেগোনা কয়েক জন। পদমর্যাদা অনুযায়ী বাকি কিছু পুলিশকর্তা ও আমলা নীল বাতি লাগানো গাড়ি চাপতে পারেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য গ্রামোন্নয়ন পর্ষদ বা এসআরডিএ- চেয়ারম্যান হিসাবে অনুব্রতও নীল বাতি লাগানো গাড়ি চাপার অধিকারী। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, হামেশাই তাঁকে লাল বাতির গাড়িতে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। সেই অভ্যাস ভোটের সময়ও রয়ে গিয়েছে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোমের কটাক্ষ, ‘‘ওঁর কাছে লাল বাতি আর নীল বাতির কী তাৎপর্য, কতটা বোঝেন, নির্বাচন বিধিও বা কতটা বোঝেন, সেটাই বড় জিজ্ঞাসাচিহ্ন! আমি মনে করি নির্বাচন কমিশনের এই বিষয়টা দেখা উচিত।’’ অন্য দিকে, বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বাংলায় এমনিতেই আইনের শাসন নেই। আদর্শ নির্বাচন বিধির পাশাপাশি আরও অনেক কিছুই লঙ্ঘন করা হচ্ছে বাংলায়। সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছে, কারা লাল বাতি পাবেন কারা পাবেন না। আমার মনে হয় নির্বাচন কমিশন এই বিষয়টিতে নজর দেবে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’

বীরভূম জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘নির্বাচনী আচরণ বিধি কার্যকর হয়ে যাওয়ার পরে লালবাতি লাগানো গাড়ি ব্যবহার করা যায় না। সে লালবাতি জ্বলুক বা না জ্বলুক। পদমর্যাদার নিরিখে কিছু ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে ছাড় রয়েছে। কিন্তু, অনুব্রত মণ্ডল সেই তালিকাভুক্ত নন। যদি সত্যিই বিধিভঙ্গ হয়ে থাকে, তা হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’’

বিতর্ক যাই-ই থাক, ডাকবাংলো ময়দানের কর্মিসভায় অনুব্রতকে পাওয়া গিয়েছে চেনা মেজাজেই। ওই সভায় লোকসভা নির্বাচনে শুধু বোলপুর শহর থেকেই ৩০-৩৫ হাজার ভোটের ‘লিড’ চাই বলে দলীয় কর্মীদের স্পষ্ট করে দেন জেলা তৃণমূল সভাপতি। একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, বোলপুর শহরের যে ওয়ার্ডে কম লিড আসবে, পুরসভা ভোটে সেই ওয়ার্ডে প্রার্থী পাল্টে দেবেন।

তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার চেয়ারম্যান, জেলা সহ-সভাপতি আপনারা পুরসভার সমস্ত কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠক করে জানিয়ে দিন, যে কাউন্সিলর মনে করছেন, লোকসভা ভোটে তাঁর ওয়ার্ড থেকে কম লিড হবে, তিনি যেন এখনই পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে চলে যান। কী ভাবে লিড আসবে তা আমি জানি না, কিন্তু আমার এই ভোট চাই।’’

দলের কোন্দল যে তাঁর মাথাব্যথা, তা স্পষ্ট হয়েছে অনুব্রতের কথায়। তিনি বলেছেন, যেখানে যে অসুবিধা আছে, ভোটের আগেই তা মিটিয়ে ফেলতে হবে। সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। এ দিনের কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মাল, জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী-সহ জেলা নেতৃত্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন