মুকুলকে বিঁধেও সাবধানী অনুব্রত

রাজনগরের প্রকাশ্য জনসভা থেকে নাম না করে মুকুল রায়কে ‘ভুঁইফোড়,’ ‘কুলআঁটি’ এবং ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ নেতা বলে কটাক্ষ করলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাজনগর শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১৩
Share:

বক্তা: রাজনগরের সভায় অনুব্রত মণ্ডল। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

রাজনগরের প্রকাশ্য জনসভা থেকে নাম না করে মুকুল রায়কে ‘ভুঁইফোড়,’ ‘কুলআঁটি’ এবং ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ নেতা বলে কটাক্ষ করলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। শুক্রবারের জনসভা থেকে মকুলকে কটাক্ষ করলেও জেলা সভাপতির গলায় কোথাও সতর্কতাও ছিল। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে ছিল বিনয়ও। বিশেষত দলে ‘ভাঙন’ ধরানোর প্রশ্নে উপস্থিত কর্মীদের উদ্দেশে অনুব্রতর বার্তা, ‘‘ভুল করবেন না। খালে পা দেবেন না। পা মচকে যাবে। কষ্ট পাবেন। আর আদিবাসী ভাইদের বলছি, কেউ হুমকি দিলে তিরিয়ে (তির ছুঁড়ে মারবেন) দেবেন। বাকিটা আমরা বুঝে নেব।’’

Advertisement

আসন্ন ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করে সংঠগন মজবুত করতে চাইছে তৃণমূল। সেই লক্ষ্যেই জেলার প্রতিটি ব্লকে জনসভা করা হচ্ছে। অনুব্রতর দায়িত্বে জেলার ১৯টি এবং পূর্ব বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের আরও ৬টি মিলিয়ে মোট ২৫টি জনসভা করার কথা। চলতি মাসের চার তারিখ থেকে শুরু হয়েছে সেই কর্মসূচি। চলবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। রাজনগরের রাজবাড়ি লাগোয় গো-হাট মাঠেই ছিল শুক্রবারের জনসভা। সেখান থেকেই বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুলের উদ্দেশে কটাক্ষ করেন।

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে এ দিনই কলকাতায় সভা ছিল মুকুলের। সেই সভায় গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন সাঁইথিয়া পুরসভার এক তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু রায়। সেই প্রসঙ্গে অনুব্রতর জবাব, ‘‘গোয়াল থেকে একটা দুষ্টু গরু বেরিয়ে গিয়েছে। কোনও ক্ষতি নেই।’’ সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে এমনটা বললেও জনসভার বক্তব্যে মুকুলের বিরুদ্ধে বিদ্রুপ এবং দলভাঙন নিয়ে সতর্কতা— দুটোই লক্ষ্য করা গিয়েছে।

Advertisement

এ দিনের জনসভা থেকে মুকুলের নাম না করে অনুব্রত বলেন, ‘‘কোনও ভুঁইফোড় নেতা, কুলআঁটি নেতা আমাদের দল থেকে চলে গিয়ে বলছে, সংখ্যালঘুদের তোষামোদ করা হচ্ছে। সেই কুলআঁটি নেতা জানেন না, সংখ্যালঘুরাও আমাদের রাজ্যেরই বাসিন্দা। আমাদের ভাই।
হালে (সবে) গিয়েছে। এখন অনেক কিছুই মনে হবে। তুমি দুনীতিগ্রস্ত। তুমি বাঁচতে গিয়েছ। আমরা দুর্নীতিগ্রস্ত নই। তাই বাঁচার প্রয়োজন নেই।’’ যদিও পরক্ষণেই উপস্থিত ভিড়ের উদ্দেশে বলেন, ‘‘ভুল করে খালে পা দেবেন না। হুমকি দিলে রুখে দাঁড়ান।’’

রাজনগরের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে জনতার উদ্দেশে অনুব্রতকে বলতে শোনা গিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে এমন উন্নয়ন হবে যে আর চাওয়ার কিছু থাকবে না। আবার প্রশ্নও ছুঁড়েছেন। বলেছেন, ‘‘কী কাজ করতে হবে বলুন। আপনারা নির্দেশ দিন, আমরা পালন করব। আমরা মানুষের সঙ্গে আছি। থাকব।’’

যা শুনে দলের নেতারা আড়ালে বলছেন, ‘‘জেলা থেকে বেশ কিছু মুকুলভক্ত তৃণমূল কর্মী-সমর্থক এ দিন কলকাতায় গিয়েছেন। মুখে মুকুলের বিরোধিতা করলেও সতর্ক তো থাকতেই হবে। কেষ্টদা শুধু সেই কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন।’’ যদিও অনুব্রত প্রকাশ্যে বলছেন, ‘‘জেলা থেকে মাত্র ৯৩ জন লোক গিয়েছিল কলকাতায়। ১৭৫৪ বুথের মধ্যে ওটা কোনও সংখ্যাই নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন