ভোটের আগেই দলে ফিরলেন আরাবুল

শিয়রে ভোট। ভাঙড় আসন পুনরুদ্ধার শাসক দলের কাছে মর্যাদার প্রশ্ন। তাই বিধানসভা ভোটের অল্প দিন আগেই সমর্যাদায় দলে ফিরিয়ে নেওয়া হল আরাবুল ইসলামকে! তৃণমূল কর্মী খুনে নাম জড়ানোয় যাঁকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল! সেই ঘোষণার ১৪ মাস পেরোতেই ক্ষমাপ্রদর্শন করা হল ভাঙড়ের দাপুটে নেতাকে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৭
Share:

এক মঞ্চে শোভন-আরাবুল।—নিজস্ব চিত্র।

শিয়রে ভোট। ভাঙড় আসন পুনরুদ্ধার শাসক দলের কাছে মর্যাদার প্রশ্ন। তাই বিধানসভা ভোটের অল্প দিন আগেই সমর্যাদায় দলে ফিরিয়ে নেওয়া হল আরাবুল ইসলামকে! তৃণমূল কর্মী খুনে নাম জড়ানোয় যাঁকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল! সেই ঘোষণার ১৪ মাস পেরোতেই ক্ষমাপ্রদর্শন করা হল ভাঙড়ের দাপুটে নেতাকে!

Advertisement

তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায় বুধবার বিজয়গঞ্জ বাজারের একটি সভায় ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুলকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গেই ব্লক সভাপতির পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে এলাকার রাজনীতিতে আরাবুলের বিরোধী শিবিরের নেতা বলে পরিচিত কাইজার আহমেদকে। ভোটের আগে এমন সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা স্বভাবতই দাবি করছে, আরাবুলকে শাস্তির ঘোষণা নেহাতই লোক-দেখানো ছিল! বিগত লোকসভা ভোটে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে সুগত বসুর জয়ের পিছনে আরাবুলের বাহিনীর অবদান ছিল। বিধানসভা ভোটেও তাঁর মতো ‘সংগঠকে’র প্রয়োজন অপরিহার্য বুঝেই আরাবুলকে কাছে টেনে নেওয়া হল!

ভাঙড় ও ক্যানিং এলাকায় দলের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য সম্প্রতি আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে কাছে টানার চেষ্টা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমে থাকার সময়ে রেজ্জাকের উপরে তৃণমূলের হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন এই আরাবুলই। পুলিশকে মারধর, জোর করে চাষিদের জমি দখল, ভাঙড় কলেজে শিক্ষিকাকে জগ ছুড়ে মারার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আরাবুলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি তৃণমূল। কিন্তু বছর দেড়েক আগে দুই দলীয় কর্মীকে খুনের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছিল। এমনকী, নিহত দুই কর্মীর পরিজনদের পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতেও তিনি বাধা দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগে আরাবুলকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

Advertisement

শাস্তি মকুব করে তাঁকে দলে ফেরার জন্যে সচেষ্ট ছিলেন আরাবুল। কালী পুজোর সময় দলনেত্রীর বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন আরাবুল। দলনেত্রীকে এর আগে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে জানান দিয়েছেন তাঁর বিশ্বস্ততাও। ক্ষমাপ্রার্থনা করে দলকে চিঠিও দিয়েছিলেন তিনি। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘আরাবুল আগেই ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে ওর সেই আবেদন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল জেলা নেতৃত্বের কাছে। তাঁরাই বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ তৃণমূলের অন্দরে আরাবুল অবশ্য গোড়া থেকেই পার্থবাবুর ‘শিষ্য’ বলে পরিচিত! আরাবুল এবং কাইজারকে ফেরানো নিয়ে শোভনের বক্তব্য, ‘‘মা ছেলেকে শাসন করে। কিন্তু কোল থেকে সরিয়ে ফেলে দেন না।’’ দল ফিরিয়ে নেওয়ায় ‘খুশি’ আরাবুল বলেন, ‘‘আমি দলের অনুগত সৈনিক। দল যা নির্দেশ দেবে, তা-ই করব।’’

দুই কর্মী খুনের ঘটনায় তৃণমূল নেতৃত্ব চাপে পড়ে আরাবুলকে বহিষ্কার করলেও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরানো হয়নি! আরাবুলের প্রত্যাবর্তনের পর সেই কথাই বলেছেন সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা বলেছিলাম, আরাবুলের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত লোক-দেখানো! পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদে তিনি তো ছিলেন। আরাবুলদের মাথায় চেপেই তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল বলে তাঁদের মাথায় তুলে রেখেছে! আরাবুল-বাহিনী ছাড়া তৃণমূলের পক্ষে ভোটে জেতা মুশকিল।’’

শাসক দলের একাংশও মানছে, আরাবুলের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া ভাঙড়ে ভোট বৈতরণী পার হওয়া কঠিন! দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘আরাবুল যদি একেবারেই ব্রাত্য হয়ে যেত, তা হলে কি আর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে থেকে যেত? পরিস্থিতি বিবেচনা করেই দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকী, দলের মধ্যে ওকে প্রার্থী করার দাবিও আছে!’’ তবে দলের মধ্যেই অন্য একাংশের প্রশ্ন, আরাবুলকে বহিষ্কারের আনুষ্ঠানিক কারণ ছিল দলের দুই কর্মী খুনের ঘটনা। তাঁদের হত্যার বিচারের কী হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন