অতঃ কিম্, দ্বন্দ্ব মোর্চায়

বন্‌ধ, অবরোধ, সরকারি সম্পত্তিতে আগুন দিয়ে দিনের পর দিন পাহাড় অচল রেখে তিনি হটিয়েছিলেন সুবাস ঘিসিঙ্গকে। তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করায় খুন হতে হয়েছে মদন তামাঙ্গকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০৩:৪৭
Share:

শুরু করেছিলেন যেখান থেকে, প্রায় সেখানে এসে দাঁড়িয়েছেন বিমল গুরুঙ্গ।

Advertisement

বন্‌ধ, অবরোধ, সরকারি সম্পত্তিতে আগুন দিয়ে দিনের পর দিন পাহাড় অচল রেখে তিনি হটিয়েছিলেন সুবাস ঘিসিঙ্গকে। তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করায় খুন হতে হয়েছে মদন তামাঙ্গকে। তার পরে ২০১১ সালে তৃণমূলের সঙ্গে সখ্য। এবং জিটিএ ভোটে প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গুরুঙ্গের সগর্ব ঘোষণা— ‘পাহাড় এখন বিরোধী শূন্য’।

পাহাড়বাসী বলছেন, এখানে বরাবর এটাই দস্তুর। সেই জায়গায় এ বার ভাগ বসায় তৃণমূল। পুরভোটের ফলে স্পষ্ট, যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করেছে তারা। মিরিকে হার মেনেছে মোর্চা। কালিম্পং, কার্শিয়াং তো বটেই, দার্জিলিঙেও আসন হারিয়েছে তারা। এবং সব শেষে দার্জিলিঙে মন্ত্রিসভার বৈঠক। এই পরিস্থিতিতে মোর্চার মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে, ‘বিরোধী শূন্য’ পাহাড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি হলে তাদের সামলানো হবে কী করে? ফলে জঙ্গি আন্দোলনের চাপ বাড়াতে থাকেন কট্টরপন্থীরা। মমতার পাহাড়ে বাংলা পড়ানোর ঘোষণাকে খড়কুটো করতে চান তাঁরা। মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিন ‘কিছু করার’ উপরেও জোর দিতে থাকেন। অন্য পক্ষ তখনও পাহাড়ে ভোটযুদ্ধে লড়াইয়ের পক্ষে। তখনই দু’পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে জিএলপি-কে সামনে রেখে ‘শান্তিপূর্ণ’ অবস্থান করে রাজভবনে মন্ত্রীদের ঢোকা আটকাতে ছক কষা হয়।

Advertisement

তা জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী বুধবার রাতের মধ্যে মন্ত্রীদের পৌঁছনো নিশ্চিত করান। মোর্চার এক নেতা জানান, এই অবস্থায় কট্টরপন্থীদেরই ‘জয়’ হয়। এবং বৃহস্পতিবারের ‘শান্তিপূর্ণ’ অবস্থান থেকে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে দার্জিলিং। মোর্চার টানাপড়েন এখানেই শেষ নয়। মুখ্যমন্ত্রী সেনা তলব করার পরে কোন পথে হাঁটা হবে, তাই নিয়েও আলোচনা চলে। এক পক্ষ চান, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্‌ধ ডাকা হোক। অন্য পক্ষ আপত্তি তোলে। তার ফলে বন্‌ধ এসে দাঁড়ায় ১২ ঘণ্টায়। শুক্রবার দিনভর পাতলেবাসের বাড়িতে বসে সব খবর নেন গুরুঙ্গ।

কট্টরদের অগ্রাহ্য করার মাসুল ঘিসিঙ্গকে কী ভাবে দিতে হয়েছিল, তা গুরুঙ্গের থেকে ভাল আর কে জানে! আবার ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ মমতার আমলে আগের মতো ‘সেফ প্যাসেজ’ পাওয়া যে কঠিন, তা-ও বোঝেন তিনি। এর মধ্যেই দলের অনেক নেতা কী ভাবে গ্রেফতারি এড়ানো যায়, সে জন্য আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন। ভানুভবনে টাঙানো নোটিসে গুরুঙ্গের নামও জড়িয়েছে। তবু মোর্চার এক পক্ষের পরামর্শ, পরিস্থিতি অশান্ত থাকলে আখেরে লাভ। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শনিবার বৈঠক মোর্চার। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রবীণ নেতা বলেন, ‘‘আমরা কিন্তু শান্তিতেই থাকতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন