সঙ্গে ছবি, তবু তিনি ভাইয়ার ‘দাদা’ নন, দাবি অর্জুনের

ব্যারাকপুর নয়াবস্তির শিবু যাদব ঘনিষ্ঠ মহলে নিজেকে ‘যদুবংশী’ এবং ‘বাহুবলী’ ভাবতে ভালবাসে। এলাকার দখল আগে থেকেই ছিল, কিন্তু শাসক দলে যোগ দেওয়ার পরে তার উত্থান হয় উল্কার গতিতে।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৫২
Share:

উত্তর ব্যারাকপুরের একটি অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে তৃণমূল নেতা অর্জুন সিংহের সঙ্গে শিবু যাদব (চিহ্নিত)। —ফাইল চিত্র।

তার ‘ভাইয়া’ হয়ে ওঠার গল্পটা বেশি দিনের নয়। তবে মাত্র ক’টা বছরে পুলিশ-প্রশাসন এবং রাজনীতির অলিন্দে তার সদর্প পদচারণা অবাক করেছে পরিচিতদেরও।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, ব্যারাকপুর নয়াবস্তির শিবু যাদব ঘনিষ্ঠ মহলে নিজেকে ‘যদুবংশী’ এবং ‘বাহুবলী’ ভাবতে ভালবাসে। এলাকার দখল আগে থেকেই ছিল, কিন্তু শাসক দলে যোগ দেওয়ার পরে তার উত্থান হয় উল্কার গতিতে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০১১ সালে তৃণমূল যখন ক্ষমতায় আসে শিবু তখন কংগ্রেসের ডাকসাইটে নেতা। তবে নিজের এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল তার ‘দাদাগিরি’। তখন তৃণমূলের সঙ্গে রীতিমতো বিরোধ ছিল শিবুর।

Advertisement

তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে মণিরামপুর, সদরবাজার, নয়াবস্তির ‘মসিহা’ হয়ে ওঠে সে। শিবু বলত, ‘‘আমার নেতা এক জনই। অর্জুন সিংহ।’’ তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুনের মদতেই তার এত বাড়বাড়ন্ত। তাই পুলিশও নাকি তাকে ডরায়।

২০১২ সালে তৃণমূলের একটি মিছিলে হামলা হয়। মারধর করা হয় কয়েক জন নেতাকে। তৃণমূল নেতা কাশীনাথ সাউ ব্যারাকপুর থানায় অভিযোগ করেন শিবুর বিরুদ্ধে। কাশীনাথবাবু ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘‘মাইক বাজানো নিয়ে গোলমাল থেকে মারপিট হয়েছিল। আমিই ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলাম। ’’ অর্জুন সিংহের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, দলের মি‌ছিলে শিবুকে দেখা গেলেও কাশীনাথবাবু বলেন, ‘‘ও আমাদের দলের কর্মী বলে তো জানি না।’’

শিবুর সঙ্গে পুলিশের খাতিরও দেখার মতোই বলে দাবি পুলিশ কর্মীদের একাংশের। বিভিন্ন পুলিশ কর্তার সঙ্গে তার নিয়মিত দেখা হতো বলে জানা গিয়েছে। গত সোমবার রাতে সদরবাজার এলাকায় এক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হন। সেই ঘটনাতেও অভিযোগের তির ভাইয়ার দলবলের দিকেই। আবার সেই রাতেই এক পুলিশ আধিকারিকের বিয়ের ভোজে শিবু হাজির ছিল বলেই স্থানীয় সূত্রের খবর। স্থানীয়দের একাংশ জানান, পুলিশের সঙ্গে শিবুর এমন দহরম-মহরম, যে তার বিরুদ্ধে পুলিশে যাওয়ার সাহস পান না প্রায় কেউই।

এক দিকে পুলিশ, অন্য দিকে রাজনৈতিক দলের নেতা— এই যোগাযোগকে হাতিয়ার করেই এলাকায় তোলাবাজি এবং সিন্ডিকেটের কারবার ফাঁদতে অসুবিধা হয়নি শিবুর। গত ক’বছরে তার অত্যাচার লাগাম ছাড়িয়েছে বলে ক্ষোভ এলাকাবাসীর। তবে তোলাবাজি, সিন্ডিকেট ছাড়াও তার হরেক কারবার রয়েছে। অভিযোগ, গঙ্গার বালির কারবার, মাটি কেটে পাচার, এমন নানা কারবার সে চালায়। অন্যান্য বালির ঘাট বন্ধ হয়ে গেলেও তার বালির ঘাটে হাত পড়ে না।

ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে মঙ্গলবার সদরবাজার এলাকায় যান অর্জুন সিংহ। স্থানীয় সূত্রের খবর, সে দিন বাসিন্দারা তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। অভিযোগও করে শিবুর নামে।

শিবুর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, অর্জুনবাবু বলেন, ‘‘আমি কাউকে তোলাবাজি করতে দেব না। সে দিন শিবু গুলি না চালালেও তার লোকেরা চালিয়েছিল। সকলেই ধরা পড়বে। শিবুও রেহাই পাবে না।’’ অর্জুনবাবু জানান, মণিরামপুর, সদরবাজার, নয়াবস্তি খুবই শান্তিপূর্ণ এলাকা। এই এলাকা যে কোনও মূল্যেই শান্ত রাখা হবে। শিবুকে আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে অর্জুনের মন্তব্য, ‘‘আমি কাউকে আশ্রয় দিলে খুল্লমখুল্লাই দিই। খারাপ লোকেদের আশ্রয় দিই না। শিবুকে আমি আশ্রয় দিইনি। শিবু বা তার লোকেদের আমি যেমন তোলাবজি করতে দেব না। তেমনই অন্য কেউ যদি তোলাবজি করতে চায়, তা-ও হতে দেব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন