জনসমাগম: মালবাজারে ভরেছে মাঠ। নিজস্ব চিত্র
পাহাড়ে আন্দোলন হলেই তার রেশ পড়ার কথা ভেবে থমথমে হয়ে উঠত মালবাজার। পৃথক রাজ্যের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে মিটিং-মিছিলে তেতে উঠত ওদলাবাড়ি থেকে নাগরাকাটা অবধি। যাঁদের নেতৃত্বে এতদিন তা হতো, সেই তাঁরাই এ দিন মালবাজারে তৃণমূলের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাঙালি-নেপালির মধ্যে বিভেদের পথে হাঁটবেন না বলে ঘোষণা করলেন। সেই দৃশ্য দেখতে মালবাজারের নর্থ কলোনির মাঠে উপচে পড়েছিল ভিড়।
তা দেখে তৃণমূলের জলপাইগুড়ির পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেও কখনও হিন্দু-মুসলিম গণ্ডগোলের চেষ্টা যেমন মানব না, তেমনই বাংলাভাষী ও নেপালিভাষীদের মধ্যে বিভেদের ছকও ভেস্তে দিতে হবে। কোনওভাবেই জনজীবন স্তব্ধ যেন না হয়, সকলকেই খেয়াল রাখতে হবে।’’
বস্তুত, শুক্রবার মালবাজারে মোর্চার কর্মীদের তৃণমূলে যোগদানের সভা ঘিরে এলাকার ব্যবসায়ী-বাসিন্দাদের মধ্যেও কৌতুহল ছিল তুঙ্গে। কারণ, জুন মাস থেকে পাহাড়ে টানা বন্ধের সময়ে মাল মহকুমাতেও ব্যবসায়িক লেনদেনও তলানিতে পৌঁছে গিয়েছিল। এই অবস্থায়, মংপং থেকে ওদলাবাড়ি, পাথরঝোরা থেকে নাগরাকাটার প্রথম সারির সব মোর্চা নেতাদের পাশে টেনে তৃণমূল যেমন আসন্ন পঞ্চায়েতে ভাল ফলের আশা করছে। তেমনই আমজনতাও শীতের মরসুমে গত চার মাসের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছে।
তবে এখনও মোর্চার ডুয়ার্সের অন্যতম নেতা বিশাল লামা, রোহিত থাপারা সক্রিয়। বিমল গুরুঙ্গও নানাভাবে যোগাযোগ চালিয়ে ফের সংগঠন চাঙ্গা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ফলে, অনেকেই কিন্তু পুরোপুরি আশ্বস্ত নন। আসরে নেমেছে সিপিএম, বিজেপিও। সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্যের দাবি, ‘‘এমন দলবদলে শান্তি ফেরে বলে মনে হয় না। এতে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়।’’ বিজেপির জেলা পর্যবেক্ষক দীপ্তিমান সেনগুপ্তের অভিযোগ, ‘‘ভয় ও প্রলোভনের দলবদলে শান্তির পরিবেশ আরও নষ্ট হবে।’’
যদিও তৃণমূলের জলপাইগুড়ির জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী দাবি করেছেন, ‘‘কারও বেশি দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। শান্তি বজায় রেখে উন্নয়নে সামিল হওয়ার ইচ্ছে আছে বলেই সভায় ভিড় উপচে পড়েছে।’’