শিবাজিকে ফের ধরতে বলল কোর্ট

শর্ত মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিল্লির আদালতে হাজির না হওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী শিবাজি পাঁজার জামিন খারিজ করে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল ব্যারাকপুর আদালত। এই গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করা হল কি না, আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে তা জানানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তবে আদালত শিবাজির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর থেকে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রিন্স আনোয়ার শা রোডের যে আবাসনে তিনি থাকেন, সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, শিবাজি বাড়িতে নেই। সকালেই বেরিয়ে গিয়েছেন। রাত পর্যন্ত তিনি বাড়িতে ঢোকেননি বলে তাঁরা জানান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৯
Share:

শর্ত মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিল্লির আদালতে হাজির না হওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী শিবাজি পাঁজার জামিন খারিজ করে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল ব্যারাকপুর আদালত। এই গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করা হল কি না, আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে তা জানানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তবে আদালত শিবাজির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর থেকে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রিন্স আনোয়ার শা রোডের যে আবাসনে তিনি থাকেন, সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, শিবাজি বাড়িতে নেই। সকালেই বেরিয়ে গিয়েছেন। রাত পর্যন্ত তিনি বাড়িতে ঢোকেননি বলে তাঁরা জানান।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরসঙ্গী হয়ে বাংলাদেশ থেকে ফেরার সময় গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে বিমানবন্দরের অভিবাসন শাখার অফিসারেরা শিবাজি পাঁজাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। দিল্লির ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিনান্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (আইএফসিআই) থেকে জালিয়াতি করে ১৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ‘লুক আউট’ নোটিস জারি করা হয়েছিল। পরে ব্যারাকপুর আদালতে তাঁকে পেশ করার সময়ে নথিপত্র নিয়ে সময় মতো সেখানে পৌঁছতে পারেননি দিল্লি পুলিশের অফিসারেরা। সেই কারণেই শর্ত সাপেক্ষে জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ী।

কিন্তু জামিনের সেই শর্ত মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিল্লির আদালতে হাজির হননি শিবাজি। এ দিন সেই সংক্রান্ত মামলাটি আদালতে ওঠার পরে দিল্লি পুলিশের আইনজীবী কল্যাণকুমার পালিত বলেন, ‘‘অভিযুক্ত বারবার আদালতে হাজির না হয়ে আদালত অবমাননা করছেন। ওঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন করছি।’’ শিবাজিবাবুর আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার, সৌম্যজিৎ রাহারা অবশ্য আদালতের কাছে আরও দশ দিন সময় চেয়েছিলেন। বিচারককে তাঁরা বলেন, ‘‘শিবাজির কনজাংটিভাইটিস (চোখের এক ধরনের সংক্রমণ) হয়েছে। তাঁর চিকিৎসা চলছে। তাই আরও দশ দিন সময় পেলে যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে তিনি আদালতে হাজির হবেন।’’ দু’পক্ষের কথা শুনে ব্যারাকপুরের চতুর্থ বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট রাজর্ষি মুখোপাধ্যায় শিবাজির জামিন খারিজ করে তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

Advertisement

দিল্লি পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছরের ২১ জুলাই কালকাজি দক্ষিণ থানায় শিবাজির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। ওই অভিযোগটি দায়ের করেন রাষ্ট্রায়ত্ত আইএফসিআই-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জীবন সিংহ। তাঁর অভিযোগ ছিল, ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে আইএফসিআই থেকে ১৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন শিবাজি। ঋণ নেওয়ার সময় শিবাজি দাবি করেছিলেন, তাঁর সংস্থা আর-পি গ্রুপ অফ কোম্পানিজ ‘চিরাগ’ কম্পিউটার তৈরি করে। তাঁদের কাছে বড় মাপের কম্পিউটার সরবরাহ করার বরাত রয়েছে। সেই কারণেই ঋণ দরকার। সেই মতো সপক্ষে সব রকম নথিপত্রও জমা দিয়েছিলেন শিবাজি।

কিন্তু ঠিক সময়ে ঋণ শোধ না করার অভিযোগে শিবাজির বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দিল্লি পুলিশের আর্থিক অপরাধ দমন শাখা। দেখা যায়, কম্পিউটার সরবরাহের বরাত আছে দাবি করে যে সব নথি তিনি জমা দিয়েছিলেন, তার সবই জাল! আসলে ওই ধরনের কোনও বরাতই ছিল না শিবাজি বা তাঁর সংস্থার কাছে। পরে দিল্লি পুলিশ শিবাজির বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, নথি জাল, নথি জাল করে প্রতারণা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৫, ৪৬৮ ও ৪৭১, ১২০বি ধারায় মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি বাদে বাকি সবগুলিই জামিনঅযোগ্য অপরাধ।

দিল্লি পুলিশের দাবি, শিবাজির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে কোনও লাভ হয়নি। নিয়মিত তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা গেলেও পুলিশের নাগালের বাইরেই থেকে গিয়েছিলেন শিবাজি। দিল্লি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ঋণ নেওয়ার সময় যে সব ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল, সেখানেও শিবাজি পাঁজা বা তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি। সেই কারণেই তাঁর নামে লুক আউট নোটিস জারি করা হয়। কারও নামে লুক আউট নোটিস থাকলে সে বিদেশে গেলে বা বিদেশ থেকে ফেরার সময় বিমানবন্দরেই ধরা পড়ে যান। শিবাজির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল।”

দিল্লি পুলিশ সূত্রের খবর, এই মামলা ছাড়াও শিবাজি পাঁজা তথা আর-পি গ্রুপ অফ কোম্পানিজের বিরুদ্ধে দিল্লির বিভিন্ন থানায় আরও অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তার প্রায় সবগুলিই সরকারি বা বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ভুয়ো নথি দেখিয়ে ঋণ নেওয়া ও তা ঠিক সময়ে শোধ না করার অভিযোগ। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাঁর সই করা চেক বাউন্স করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই মামলাগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন