উদ্ধার দুই কিশোরী

নিজেই ‘কনে’ সেজে পুলিশের টোপ দালালকে

টোপের বদলে পাল্টা টোপ। বাড়ির লোককে বিয়ের টোপ দেখিয়ে আর মোটা টাকা দিয়ে কিশোরীকে বেচে দেওয়া হয়েছিল ভিন রাজ্যে। তাকে উদ্ধার করতে সেই চক্রের লোকজনকেই পাল্টা টোপ দিয়ে কাজ হাসিল করল পুলিশ।

Advertisement

নুরুল আবসার ও দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৭
Share:

প্রধান অভিযুক্ত মেহফিজা বিবি

টোপের বদলে পাল্টা টোপ। বাড়ির লোককে বিয়ের টোপ দেখিয়ে আর মোটা টাকা দিয়ে কিশোরীকে বেচে দেওয়া হয়েছিল ভিন রাজ্যে। তাকে উদ্ধার করতে সেই চক্রের লোকজনকেই পাল্টা টোপ দিয়ে কাজ হাসিল করল পুলিশ।

Advertisement

বিয়ের টোপের উত্তরে বিয়েরই টোপ! বিক্রি হবেন বলে ‘কনে’ সাজলেন সাঁকরাইল থানার মহিলা কনস্টেবল!

কী রকম?

Advertisement

বাড়ির লোকজনকে বিয়ের মিথ্যা আশ্বাস আর ৩৫ হাজার টাকা গুঁজে দিয়ে সাঁকরাইল থেকে তেরো বছরের এক কিশোরীকে হরিয়ানায় পাচার করে দিয়েছিল দালালরা। বাড়ির লোকে প্রথমে বুঝতে পারেননি। মেয়েকে কিছুতেই ফোনে না পেয়ে ক’দিন পর থেকে শুরু হল সন্দেহ। এ মাসের গোড়ায় বাবা সাঁকরাইল থানায় গিয়ে জানালেন, মেয়ে ১৭ জুলাই থেকে নিখোঁজ। তাকে অপহরণ করা হয়েছে।

অনুসন্ধান শুরু করে পুলিশ হাওড়া থেকেই ১৬ অগস্ট গ্রেফতার করল পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত সাত জনকে। সেই দলেই ছিল মেহফিজা বিবি। সে-ই ঘটক সেজে এসে বিয়ে দেওয়ার নাম করে নাবালিকাদের তুলে দিত দালালদের হাতে।

মধ্যবয়স্ক মেহফিজাই পুলিশকে জানাল, কিশোরীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হরিয়ানায়!

পুলিশ রওনা দিল হরিয়ানা। সঙ্গে মেহফিজা। সে-ই পুলিশকে পথ দেখিয়ে হরিয়ানার পালওয়াল জেলার বউনিখেরা গ্রামে নিয়ে গেল। দালালদের বলল, সঙ্গে করে সে নতুন একটি মেয়েকেও নিয়ে এসেছে। সাঁকরাইলের মহিলা কনস্টেবল সেই ভূমিকায় অভিনয় করে গেলেন! ২২ অগস্ট বউনিখেরার ডেরায় অভিযান চালাল পুলিশ! কিন্তু যাকে খুঁজতে যাওয়া, সে তো নেই সেখানে! ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে ডেকে উঠল অন্য একটি মেয়ে! এ মেয়ের বাড়ি উলুবেড়িয়া। একেও মেহফিজাই নিয়ে এসেছিল। বাংলায় কথা বলা পুলিশকে দেখে মেয়েটি সাহস করে মুখ খুলেছে! তাকে উদ্ধার করে পুলিশ আবার মেহফিজাকে নিয়ে পড়ল। দিল্লিতে বসে মেহফিজাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও এক দালালের নাম জানা গেল।

তার পর ফের সেই টোপ। আবারও কনে সাজলেন সেই কনস্টেবল। মেহফিজা দালালকে ফোন করে বলে, ‘আমি আরও একটা মেয়ে এনেছি। কিনতে চাও তো এস। ভাল দাম পাবে।’ না বুঝে পুলিশের খপ্পরে এসে পড়া সেই দালালই পরের দিন বাধ্য হয়ে পুলিশকে নিয়ে গেল মথুরার কামার গ্রামে। সেখানে কুলদীপ চৌধুরির বাড়িতে পাওয়া গেল সাঁকরাইলের কিশোরীকে। তবে কুলদীপ ও তার বাবা লক্ষ্মণ চৌধুরি বাড়িতে ছিল না। কিন্তু কিশোরীকে উদ্ধার করে গ্রাম থেকে বেরোনোর মুখে পুলিশকে ঘিরে ফেলল অন্তত শ’পাঁচেক লোক। গ্রামের বউকে কিছুতেই নিয়ে যেতে দেবে না তারা।

পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শক্তিবাহিনীর সদস্যরা সব মিলিয়ে ১০ জন আর বিপক্ষে গোটা গ্রামের মানুষ। সাময়িক ভাবে বিহ্বল হয়ে পড়েছিল পুলিশ। ঠিক সেই সময়েই বীরত্বের পরিচয় দিলেন সাঁকরাইল থানার সাব-ইনস্পেক্টর পিয়ালি ঘোষ। পাঁচ বছরের চাকরি জীবনে এ রকম অভিজ্ঞতা পিয়ালির প্রথম। তবু ওই কিশোরীকে নিয়েই বেরোবেন, পণ করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে শূন্যে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেন তিনি। গুলির শব্দে জনতা আর এগোতে সাহস পায় না। ততক্ষণ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির সদস্যেরা ফোন করেন পুলিশ-প্রশাসনের উপরমহলে। চাপে পড়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান। তাঁর মধ্যস্থতায় ওই কিশোরীকে নিয়ে গ্রাম থেকে বেরোন সম্ভব হল।

শঠে শাঠ্যং।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন