একজন খাদ থেকে উপরে ওঠার রাস্তা হাতের মুঠোয় চলে এসেছে ভেবে হাসছেন। আর এক জন ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও ঘরে-বাইরে ধাক্কা খেয়ে প্রায় খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে।
পুরভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে শুক্রবার শিলিগুড়ি পুরভোটের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বামেদের মেয়র পদপ্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য ও তৃণমূলের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের চেহারায় ধরা পড়ল এই ছবি। দু’জনের লড়াই যেন পুরভোটের ময়দানে ‘ডার্বি’।
শনিবার পুরভোটের মুখে এই দু’জনকে দেখে কেউ ভাবতেই পারবেন না, অতীতে আড়ালে-আবডালে দু’জনের মধ্যে কী সুসম্পর্কই না ছিল! ঘনিষ্ঠেরা বলে থাকেন, একে অন্যকে নাকি সাহায্যও করেছেন। এখন দু’জনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শহর এতটা বুঁদ যে, এসজেডিএ-এর বহু কোটি টাকার দুর্নীতি মামলাও চাপা পড়ে গিয়েছে। দলের নেতাদের একাংশের রাতারাতি ধন-সম্পত্তির মালিক হওয়া নিয়েও তাপ-উত্তাপ আশ্চর্যরকম কম। শহরের জঞ্জাল সাফাই, জলের আকাল, ত্রিফলা আলো বসানোর নামে টাকা নয়ছয়, বিল্ডিং প্ল্যান পাস করানোর নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ নিয়েও ভোটের বাজারে খুব একটা হইচই নেই।
এর মধ্যে কী করে বামেরা ভাল ফলের আশা করছেন? বাম শিবিরের সূত্রে খবর, তাঁদের আশা, তৃণমূল-কংগ্রেস-বিজেপির মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হবে। তবে বামেদের হিসেব মতো, বিজেপি এবং কংগ্রেসের তেমন প্রভাব শিলিগুড়িতে পড়বে না। বামেরা সেক্ষেত্রে নিজেদের শক্তি ধরে রাখলেই জয় মুঠোয় চলে আসবে। ২০০৯ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের ঝড়েও ৪৭ আসনের মধ্যে বামেরা ১৭টি ধরে রাখতে পেরেছিল। উপনির্বাচনেও জিতেছে ১টি আসন। অশোকবাবুর হিসেব হল, ‘‘ দলের নিজস্ব ভোট তো রয়েইছে। তৃণমূল বিরোধী ভোটও এবার বেশি ভাগ হবে না। প্রধান ভোটটা আমরাই পাব।’’ প্রাক্তন পুরমন্ত্রী মুচকি হেসে এটাও দাবি করছেন, অনেক ডানপন্থী দলের নেতা-কর্মীরাও তৃণমূল বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হতে দেবেন না বলে তাঁকে জানিয়েছেন। এর পরেই অশোকবাবুর আশঙ্কা, ‘‘এবার তৃণমূলকে মানুষ পুরবোর্ডে বসিয়ে ফের শহরের পরিষেবা তলানিতে যেতে দেবেন না, এটা বুঝেই অবাধ ভোটে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বাইরের লোকজন এনে সংযোজিত এলাকায় ভোট করানোর চেষ্টা হলে মানুষই রুখে দেবেন।’’ তাঁর আরও হুঁশিয়ারি, ‘‘বহিরাগতদের এনে রক্তারক্তি করলে ভুল করবে তৃণমূল। তা আত্মহত্যার সামিল হয়ে যাবে।’’
‘ডার্বি’র প্রতিপক্ষ শিবির অবশ্য অশোকবাবুর কথায় টিপ্পনী কেটেছেন। গৌতমবাবু বলেছেন, ‘‘অনেকে হারের আগেই টের পেয়ে যান। তাই আগাম হেসে নেন।’’ সেই সঙ্গে অশোকবাবুর অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি গৌতমবাবুর। তাঁর দাবি, ‘‘পুরসভায় প্রশাসক বসানোর পরে আমরা যে পরিষেবা দিয়েছি, তা ২৮ বছরে বামেরা পারেনি। তাই আবার কেন মানুষ ওঁদের চাইবেন? আমরাই নিরঙ্কুশ সংখাগরিষ্ঠতা পাব।’’
এতই যদি নিশ্চিত তৃণমূল, তা হলে কেন সংযোজিত এলাকার ১৭টি ওয়ার্ডে বহিরাগতদের আনাগোনার অভিযোগ উঠছে? ওখান থেকে নাকি যে ভাবে হোক তৃণমূল ১৪টি আসন ঘরে তুলতে চাইছে? গৌতমবাবু বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু শুক্রবার প্রায় সকাল থেকে রাত ৮টা অবধি দফায়-দফায় গৌতমবাবুকে স্রেফ সংযোজিত এলাকারই মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। তিনি জানেন, দলনেত্রী বলেছেন শিলিগুড়ি তাঁর চাই। মেয়র হওয়ার স্বপ্ন গৌতমবাবুর ভেঙে গিয়েছে ভোটের আগেই। বিজেপি-র সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া ও কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকারও চান, বোর্ড গৌতমবাবুরও অধরা থাকুক। তাই ভোটের মুখে অ্যাডভান্টেজ অশোক-ই।