খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ডাকাতরানি’ বলে এর আগে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। আর বুধবার বারাসতে আদালতে ঢোকার মুখে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খান বললেন, “মদন এ মাসেই গ্রেফতার হবে। আর ভোটের ছ’মাস আগে মুকুল।” কী সূত্রে তিনি এই দাবি করছেন, তা ব্যাখ্যা করেননি আসিফ। তিনি শুধু বলেন, “আমার কথা মিলিয়ে নেবেন।”
শুধু তা-ই নয়, সারদা থেকে রাজ্যের ১২২ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি আর্থিক সুবিধে নিয়েছেন বলেও এ দিন দাবি করেছেন আসিফ। এর আগে আদালত চত্বরে আসিফের গলার আওয়াজ চাপা দিতে প্রিজন ভ্যান চাপড়েছিল পুলিশ। বুধবার নাটক তত দূর গড়ায়নি। আদালত চত্বরের যতটা সম্ভব ভেতরে গাড়ি ঢুকিয়ে আসিফকে নামায় পুলিশ। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করা শুরু করতেই ঠেলে-গুঁতিয়ে আসিফকে আদালতের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হতে থাকে। এই ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই আসিফ বলেন, “আমার কাছে অনেক তথ্য রয়েছে। সময় মতো সব ফাঁস করব।”
সারদা কেলেঙ্কারিতে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তি। ইডি এবং সিবিআইয়ের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে আরও কয়েক জনকে। এ দিন আসিফ ভবিষ্যদ্বাণীর ঢঙে বলেন, সারদা থেকে আর্থিক সুবিধে নেওয়া ১২২ জন প্রভাবশালীর প্রত্যেককে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করবে। প্রয়োজনে গ্রেফতারও করবে। তিনি কাদের কথা বলছেন, জানতে চাওয়া হলে ‘ধীরে বন্ধু ধীরে’ ঢঙে হাত নেড়ে মুচকি হাসেন আসিফ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বুধবারও কড়া তোপ দেগেছেন তাঁর দলের এই প্রাক্তন নেতা। বলেছেন, “২৮ বছর সাংসদ থেকেও যে মহিলা নিজের বাড়ির উল্টো দিকের বস্তির উন্নয়ন করতে পারেন না, তিনি কী ভাবে রাজ্যের উন্নয়ন করবেন!” এ দিন মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট এডুইন লেপচার এজলাসে আসিফকে তোলা হলে তাঁর জেল হেফাজতের দাবি জানান সরকারি কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন দে। তিনি বলেন, দু’টি সংস্থার কাছে টাকা নিয়েছেন আসিফ। তা উদ্ধারে আরও সময় প্রয়োজন। আসিফের আইনজীবী লোকেশ শর্মা জামিনের আবেদন জানিয়ে বলেন, আসিফকে ২৭ দিন জেলে রাখার পরেও পুলিশ কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত আসিফের ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। আসিফের ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে মন্তব্য করতে চাননি রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।
এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালের পাঁচ জন চিকিৎসকের একটি দল কুণাল ঘোষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে জেলে গিয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, কুণাল একেবারেই স্বাস্থ্য পরীক্ষায় রাজি ছিলেন না। তিনি চিকিৎসকদের বলেন, “আপনারা তো সরকারি ডাক্তার। আপনাদের দেখাব না।” পরে অনেক বুঝিয়ে-সুজিয়ে ডাক্তাররা কুণালকে কিছুক্ষণ পরীক্ষা করতে পারেন। পরে চিকিৎসক দলের এক সদস্য বলেন, “প্রাথমিক ভাবে দেখে মনে হয়েছে, ওঁর শারীরিক সমস্যা তেমন নেই। কিন্তু মানসিক ভাবে খুবই অস্থির।” কারা দফতর সূত্রেও বলা হয়েছে, কুণালের মানসিক অবস্থা ভাল নয়। এক কারা-কর্তার কথায়, “এসএসকেএম-এর দলে এক জন মানসিক রোগের চিকিৎসকও ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে কুণালের মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।”