শিক্ষকদের নম্বর পড়ুয়াদের হাতে

রীতিমতো ফর্ম পূরণ করে সরাসরি অপছন্দের শিক্ষকের নাম জানতে চাওয়া হচ্ছে। পড়ুয়ার মাধ্যমে কোনও শিক্ষককে ‘অপছন্দের’ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করার এই প্রক্রিয়া অপমানজনক বলেই মনে করছেন শিক্ষকদের একটি বড় অংশ।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

অভিভাবকদের দিয়ে স্কুলশিক্ষকদের মূল্যায়নের পথ দেখিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিল বর্ধমান। এক ধাপ এগিয়ে স্কুলপড়ুয়াদের দিয়ে শিক্ষক-মূল্যায়নে পথিকৃতের ভূমিকায় পূর্ব মেদিনীপুর। সেখানে রীতিমতো ফর্ম পূরণ করে সরাসরি অপছন্দের শিক্ষকের নাম জানতে চাওয়া হচ্ছে। পড়ুয়ার মাধ্যমে কোনও শিক্ষককে ‘অপছন্দের’ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করার এই প্রক্রিয়া অপমানজনক বলেই মনে করছেন শিক্ষকদের একটি বড় অংশ।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বাদলপুর বিদ্যাভবন সূত্রের খবর, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে একটি ফর্ম প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে একেবারে উপরে পড়ুয়ার নামের জায়গা। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের ফর্ম পূরণ করে নির্দিষ্ট জায়গায় নিজের নাম লিখতে হবে। তার পরে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছে। স্কুলের পরিকাঠামো থেকে শুরু করে পড়ুয়ারা কী কী পরিষেবা পায় এবং তার মান কেমন, তা খোলাখুলি জানতে চাওয়া হচ্ছে।

অন্যান্য প্রশ্ন নিয়ে তেমন আপত্তি না-থাকলেও বিতর্ক শুরু হয়েছে ১৩ নম্বর প্রশ্ন নিয়ে। সেখানেই জানতে চাওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট পড়ুয়া কোন কোন শিক্ষককে অপছন্দ করে। নাম জানানোর সঙ্গে সঙ্গে অপছন্দের কারণটাও লিখতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রধান শিক্ষককে পড়ুয়ারা কতটা পছন্দ বা অপছন্দ করে, কেন করে— সেটাও নিজেই জানতে চেয়েছেন প্রধান শিক্ষক সুবোধকুমার করণ।

Advertisement

প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষকদলের এক সদস্য বলেন, ‘‘ওই প্রধান শিক্ষক পড়ুয়াদের কাছে যা যা জানতে চেয়েছেন, সেগুলি কী ভাবে প্রধান শিক্ষক নিজেই জেনে নিতে পারেন, তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উনি বিতর্ক বাধিয়েছেন ফর্ম বিলি করেই।’’ পঞ্চম শ্রেণির কোনও পড়ুয়ার চোখে কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকার মূল্যায়ন কতটা যথার্থ হওয়া সম্ভব, তা নিয়েও শিক্ষক শিবির সন্দিহান।

ওই ফর্মে মূল্যায়নকারী পড়ুয়ার নাম উল্লেখের ব্যবস্থা রাখার বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছেন বহু শিক্ষক। কারণ, কোনও শিক্ষককে অপছন্দের মানুষ হিসেবে বেছে নিলে সংশ্লিষ্ট ছাত্র বা ছাত্রী রোষের মুখে পড়তে পারে। এবং তার ফলে গোটা স্কুলেই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে চিড় ধরতে পারে।

এমন ঝুঁকি কেন নিলেন প্রধান শিক্ষক? জেলার স্কুল প্রশাসনের তরফ থেকে কি কোনও চাপ ছিল?

নিজেই ব্যাখ্যা দিচ্ছেন সুবোধবাবু। তাঁর দাবি, ফর্মে প়ড়ুয়াদের নাম থাকলেও তা প্রকাশ্যে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ, পুরোটাই তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাঁর মতে, এটার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। স্কুলে কোন শিক্ষকের সম্পর্কে কার কেমন ধারণা, সেই বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকতেই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে জানাচ্ছেন সুবো‌ধবাবু।

পড়ুয়াদের কাছ থেকে মূল্যায়নের রিপোর্ট পাওয়ার পরে কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে জানান সুবোধবাবু। তবে সরকারি পোষিত স্কুলে ডিআই বা স্কুল পরিদর্শক কিংবা পরিচালন সমিতিকে না-জানিয়ে এই প্রক্রিয়া চালু করা যায় কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুজিত মাইতি বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।’’

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘কিছু দিন ধরেই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। প্রধান শিক্ষকের তরফে এই ধরনের পদক্ষেপে সমস্যা আরও বাড়বে। এটা শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও অপমান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন