‘বাজপেয়ীকে কখনও কটু কথা বলতে শুনিনি’

ঘরের ভিতরে সাংবাদিকদের ভিড়। সাংবাদিক সম্মেলন হবে। ঢুকতেই পরিচিত স্নিগ্ধ হাসিটা হেসে কাছে ডাকলেন।

Advertisement

সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ০১:৪২
Share:

কৃষ্ণনগরে অটলবিহারী বাজপেয়ী। ছবি অমিতকুমার বিশ্বাসের সৌজন্যে প্রাপ্ত

সালটা ১৯৯৯। কৃষ্ণনগরের কলেজ মাঠে মিটিং সেরে তিনি ঢুকলেন সার্কিট হাউসে। আমি সে বার কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। দেখা করতে গেলাম।

Advertisement

ঘরের ভিতরে সাংবাদিকদের ভিড়। সাংবাদিক সম্মেলন হবে। ঢুকতেই পরিচিত স্নিগ্ধ হাসিটা হেসে কাছে ডাকলেন। পাশে বসতে বললেন। তিনি তখন প্রধানমন্ত্রী। কৃষ্ণনগরে সেই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী সভা করতে এসেছেন তাঁর দলের প্রার্থীর হয়ে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন শান্ত ভাবে। একেবারে শেষ দিকে আমার কাঁধে হাত দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আমাদের প্রার্থী’।

সেই শুরু। তার পরে অনেক বার আমরা কাছাকাছি এসেছি। এক বছর পরে তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছি। ২০০০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আমি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলাম। মহাকাশ, পারমাণবিক শক্তি, পরিসংখ্যান প্রকল্প প্রয়োগ দফতরের প্রতিমন্ত্রী করা হল আমায়। অটলজি স্পিকারকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিলেন, এই দফতর সংক্রান্ত বিষয়ে আমিই উত্তর দেব।

Advertisement

আজ ভাবতে গিয়ে অবাক লাগে, এমন এক জন বিরাট মনের মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অনেকটাই কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। নানা বিষয়ে তাঁর দারুণ পাণ্ডিত্য। সংসদে কোনও বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে আমরা এক সঙ্গে বসতাম। সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবকে ডাকা হত। আলোচনা করে ঠিক করা হত, কী উত্তর দেওয়া হবে। তখনই দেখেছি, কী ভাবে সকলের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমি সেটা শেখার চেষ্টা করেছি।

খেতে খুব ভালবাসতেন অটলজি। মাঝে-মধ্যেই আমার ডাক পড়ত তাঁর বাড়িতে। খাওয়ার টেবিলে বসে নানা বিষয়ে আলোচনা হত, রাজনীতি থেকে শুরু করে সরকারের নানা কর্মসূচি ও লক্ষ্য নিয়ে। উনি বেশি কথা বলতেন না, অল্প কথাতেই অনেকটা বুঝিয়ে দিতেন। এমনিতে নিরামিষ খেতে ভালবাসতেন। তবে ওঁর পালিত মেয়ের সঙ্গে বাঙালির বিয়ে হওয়ার কারণে বাঙালি খাবারেও অভ্যস্ত হয়েছিলেন উনি। ভালওবাসতেন আমাদের রান্না।

২০০৩ সালে অটলজির সঙ্গে তুর্কি গেলাম। সেখানে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী। মূর্তিটা তৈরি করেছিলেন আমাদের কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণীর শিল্পী গৌতম পাল। সেখানকার একটা রাস্তারও নামকরণ করা হল রবীন্দ্রনাথের নামে। সেই সফরে সঙ্গে থেকে দেখেছি, সাহিত্যেও তাঁর কী দখল!

সবচেয়ে বড় কথা ছিল তাঁর রুচিবোধ। কোনও দিন বিরোধী দল বা জোটের শরিক সম্পর্কে একটা কটু কথা বলতে শুনিনি। ৩১টা আঞ্চলিক দল নিয়ে সরকার চালিয়ে গিয়েছেন। দেখতাম কী ভাবে সকলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেই কারণে তাদের পক্ষেও অটলজিকে নেতা বলে মানতে কোনও অসুবিধা হত না। এখন এই মানের নেতা আর নেই। আগামী দিনে জন্মাবে কি না, সেটাও সন্দেহের।

আমারও বয়স হয়েছে। স্মৃতিরা ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছে। তবুও অটলজিকে ঘিরে থাকা অজস্র মুহূর্ত মনের মধ্যে ভিড় করে আসছে। মনটা বড় ভারাক্রান্ত।

লেখক কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement