সরকারি হাসপাতালে হাজিরা-কারচুপিতে যত দোষ, নন্দ ঘোষ সাব্যস্ত করে তাকেই নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অচিরেই পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় বহাল তবিয়তে ফিরে এসেছে সেই হাজিরা খাতা!
চিকিৎসকেরা যাতে সময়মতো হাসপাতালে আসেন এবং সময়ের আগে যাতে হাসপাতাল থেকে চলে না-যান, সেটা নিশ্চিত করতে বাধ্যতামূলক ভাবে বায়োমেট্রিক যন্ত্রে আঙুলের ছাপ দিয়ে হাজিরা চালু করেছিল মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা এমসিআই। কারণ, খাতায় হাজিরায় অনেক কারচুপি করা যেতে পারে এবং সেটা ব্যাপক হারে হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তার জেরেই এমসিআই-এর নির্দেশে সব মেডিক্যাল কলেজে খাতায় হাজিরা বন্ধ হয়ে যায়। তাতে ক্ষোভ ছিল চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের।
এই ভাবে কিছু দিন চলার পরে পরিস্থিতিতে ফের পরিবর্তন ঘটেছে বিস্তর। মাসখানেক হল নির্দেশিকা জারি করে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়ে দিয়েছে, বায়োমেট্রিক হাজিরার পাশাপাশি রাজ্যে আপাতত খাতাও স্বমহিমায় বহাল থাকছে! বায়োমেট্রিক যন্ত্র সর্বত্র নির্ভুল ভাবে কাজ করছে, এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরে খাতার ব্যবহার বন্ধ করা হবে।
তারই মধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে এমসিআই ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যে-নিয়ন্ত্রক সংস্থা বায়োমেট্রিকের নিয়ম চালু করেছিল, তাদেরই যদি অস্তিত্ব না-থাকে, তা হলে সেই নিয়ম বলবৎ থাকাটা প্রায় অসম্ভব। ফলে আদৌ আর বায়োমেট্রিক যন্ত্রে হাজিরার বন্দোবস্ত কার্যকর থাকবে কি না, তা নিয়েই সংশয় দেখা গিয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ মনে করছে, শেষ পর্যন্ত জয় হল চিকিৎসকদেরই। কেননা বায়োমেট্রিক হাজিরার বিরুদ্ধে তাঁদের বক্তব্য মেনে নেওয়া হল। যদিও গত ১৩ অগস্ট জারি করা সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকা সম্পর্কে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘বেশ কিছু জায়গায় বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ঠিকঠাক কাজ করছে না। চিকিৎসকেরা হাজিরা দিলেও সেটা নথিভুক্ত হচ্ছে না। মেশিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই সব সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাজিরা খাতা আবার বন্ধ করে দিয়ে আমরা শুধু বায়োমেট্রিক হাজিরাই চালু করব।’’
স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরের খবর, বায়োমেট্রিক যন্ত্র খারাপ হওয়াটা হাজিরা খাতার ফিরে আসার একমাত্র কারণ নয়। আসলে বায়োমেট্রিক হাজিরা নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে যে-ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল, তাতে রাশ টানতে চাইছে সরকার। কারণ, হাজিরার কড়াকড়ির জন্য অনেক সরকারি ডাক্তার বিশেষত সিনিয়র চিকিৎসকেরা বা শিক্ষক-চিকিৎসকেরা চাকরি ছাড়তে চাইছেন। ডাক্তারের আকালে এমনিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরকে। এই অবস্থায় চিকিৎসকদের কিছুতেই হাতছাড়া করতে রাজি নয় তারা।
অগত্যা ফের খাতায় হাজিরা!