নিশানায় মন্ত্রী মলয়

মাফিয়ারাজে শিল্প হবে কী করে, তোপ বাবুলের

ঝালমুড়ি পর্ব অতীত। রাজ্যে শিল্পায়নের চাকা থমকে যাওয়ার জন্য ফের শাসকদলের বিরুদ্ধেই সুর চড়ালেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। শাসকদলের সিন্ডিকেট-রাজ ও তোলাবাজির দাপটেই রাজ্যে শিল্প আসছে না বলে অভিযোগ করে এ প্রসঙ্গে সরাসরি রাজ্যের এক মন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলেছেন আসানসোলের সাংসদ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৫ ০৩:১১
Share:

ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের ৮৭তম বার্ষিক সাধারণ সভার বৈঠকে (বাঁ দিক থেকে) নীতি আয়োগের সদস্য বিবেক দেবরায়, বণিক সভার বিদায়ী সভাপতি রূপেন রায় এবং কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। শনিবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

ঝালমুড়ি পর্ব অতীত। রাজ্যে শিল্পায়নের চাকা থমকে যাওয়ার জন্য ফের শাসকদলের বিরুদ্ধেই সুর চড়ালেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। শাসকদলের সিন্ডিকেট-রাজ ও তোলাবাজির দাপটেই রাজ্যে শিল্প আসছে না বলে অভিযোগ করে এ প্রসঙ্গে সরাসরি রাজ্যের এক মন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলেছেন আসানসোলের সাংসদ। তাঁর অভিযোগ, নেই-শিল্পের রাজ্যে শাসকদলের নেতাদের চাপেই কারখানা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা।

Advertisement

চলতি সপ্তাহেই ধর্মতলার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী দলের নেতাদের একাংশকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সিন্ডিকেট করতে চাইলে তৃণমূল ছাড়তে হবে। আগামী বছর বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই দলের ভাবমূর্তি শোধরাতে তাঁর এই হুঁশিয়ারি। কিন্তু খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর কথাতেও যে পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি, তা যে কথার কথা হয়েই রয়ে গিয়েছে, প্রায় রোজই তাঁর নিদর্শন মিলছে। শাসকদলের সিন্ডিকেটের চাপে আটকে গিয়েছে বীরভুমে রাস্তা তৈরির কাজ। রাজারহাটের সিন্ডিকেট নিয়ে শাসকদলের বিধায়কেরাই একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন।

শনিবার ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে গিয়ে এই প্রসঙ্গটাই তুলে আনেন বাবুল। অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতির সমালোচনা করলেও অনুষ্ঠান শেষে সিন্ডিকেট-রাজ নিয়ে শাসক দলকে রীতিমতো তোপ দাগেন তিনি। বাবুলের কথায়, ‘‘সিপিএমের আমলে সংগঠিত অপরাধ হতো। একজনকে টাকা দিলেই হতো। কিন্তু এখন মাফিয়ারাজ চলছে।’’ এই প্রসঙ্গেই সরাসরি রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের নাম করে বাবুলের অভিযোগ, ‘‘মলয় ঘটক বা অন্যরা এমন হুজ্জুতি করছেন যে, সংস্থা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!’’ তাঁর দাবি, অনেক কারখানার মালিকই সাহায্যের জন্য তাঁর দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু বাবুলের আশঙ্কা, তাঁদের নাম প্রকাশ্যে বললে সেগুলিও বন্ধ হয় যাবে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এটাই তো পরিস্থিতি!’’

Advertisement

বাবুলের অভিযোগ উড়িয়ে মলয়বাবু পাল্টা বলেন, ‘‘যত সব

বাজে কথা। গত চার বছরে আসানসোলে অনেক কিছু হয়েছে, যার তালিকা বলে শেষ করা যাবে না।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর কটাক্ষ, ‘‘গত দেড় বছরে উনি (বাবুল) আসানসোলে এসে শুধু গান করেছেন, ঝাড়ু দিয়েছেন আর ব্যায়াম করেছেন!’’

সরকারি লাল ফিতের ফাঁসের মতোই সিন্ডিকেট-রাজ ও তোলাবাজি নিয়ে বহু বার সরব হয়েছে শিল্পমহল। একাধিক সংস্থা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বা বন্ধ করে দেওয়ার কথা সরকারকে জানিয়েছে। কিন্তু তার পরেও বিশেষ লাভ হয়নি বলেই অভিযোগ শিল্পমহলের একাংশের। বস্তুত, এই প্রসঙ্গটাই এ দিন তোলেন বাবুল। তিনি বলেন, ‘‘রাজারহাটেই যদি প্রতিটি গলিতে সবাইকে খুশি করে লগ্নি করতে হয়, তা হলে মানুষ করবে কেন?’’

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঝালমুড়ি খাওয়ার পরে তাঁদেরই বিরুদ্ধে এত সরব? বাবুল যেন জানতেন প্রশ্নটা উঠবে। নিজেই এই প্রসঙ্গ তুলে পরে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে সমালোচিত হওয়ার পরেও আমি কিন্তু যেখানে যা খাবার, খেয়েছি। তা ঝালমুড়ি বা আইসক্রিম যাই হোক। আসলে মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি।’’ বাবুলের বক্তব্য, বর্তমান সরকারের আমলে বাস্তবে লগ্নির হিসেব নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এ সব নিয়ে এ দিন সভার ফাঁকে রাজ্যের অর্থ তথা শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে তাঁর কথা বলার ইচ্ছে ছিল বলে নিজেই জানিয়েছেন বাবুল। গোড়ায় সভায় আসার আশ্বাস দিলেও বণিকসভা সূত্রের খবর, শেষ মুহূর্তে অমিতবাবু লন্ডন সফর নিয়ে ব্যস্ততার কারণে আসতে পারবেন না বলে জানান। এ নিয়ে পরে শিল্পমন্ত্রীকে ফোন বা এসএমএস করা হলেও জবাব মেলেনি।

এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডন সফর কতটা কার্যকরী হবে? সিঙ্গাপুরে কতটা হয়েছে, পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে সংশয়ী বাবুলের বক্তব্য, ১০০ জন প্রতিনিধির এই সফরে সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই হবে না। যে ভাবে অর্থের (দান খয়রাতি) অপচয় হচ্ছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীকে একই সঙ্গে এ দিন ‘অল দি ভেরি বেস্ট’ বলে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।

এ দিন বণিকসভার মঞ্চে কেন্দ্রীয় শিল্প নীতি ও উৎসাহ দফতরের সচিব অমিতাভ কান্ত পশ্চিমবঙ্গের পরিকল্পনার প্রশংসা করলেও জমি পাওয়ার সমস্যা এড়াতে সরকারি ভূমিকা থাকার পক্ষেই সওয়াল করেন। তাঁর মতে, জমি অধিগ্রহণ ও জমির দাম ঠিক করার ক্ষেত্রে কৃষকের সঙ্গে আলোচনা, দু’টিই পদক্ষেপই করতে হবে সরকারকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন