আন্দোলনের সিঁদুরে মেঘ ফের লালগড়ের আকাশে।
এ বার আর পুলিশি সন্ত্রাসের বিরোধিতায়, মাওবাদীদের সমর্থনপুষ্ট আন্দোলন নয়। আন্দোলনের পথে যাচ্ছেন ধান কেলেঙ্কারিতে কার্যত সর্বস্বান্ত এই তল্লাটের সাধারণ কৃষকরা। যাঁরা সরকারি সহায়ক মূল্যে ফেব্রুয়ারি-মার্চে কৃষি সমবায় উন্নয়ন সমিতির কাছে ধান বিক্রি করেছিলেন। পনেরো দিনের মধ্যে টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত একটা পয়সাও পাননি। এই খরিফ মরসুমে চাষ করার টাকা তাঁদের হাতে নেই। তাই লালগড়ের বিস্তীর্ণ তল্লাটে বিঘার পর বিঘা জমি বেবাক ফাঁকা পড়ে। চাষের অনুকূল বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরেও।
জানা গিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে জঙ্গলমহলের একাধিক ব্লকে শিবির করে ধান কেনা হয়। এর মধ্যে লালগড় ব্লকের ধরমপুর পঞ্চায়েতেই ১,৩০০ কুইন্ট্যাল ধান কেনা হয় (দাম প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা)। প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, শুধু লালগড়ের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ওই ধান কেলেঙ্কারির অঙ্ক দু’কোটি টাকারও বেশি। প্রশাসনের হিসেবে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা তিনশোর উপরে। ভাগচাষি ও শ্রমিকদের ধরলে সংখ্যাটা হাজার ছাড়াবে। শাসক দলের অন্তত সাত-আট জন স্থানীয় নেতা-নেত্রী ও পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধির নাম এতে জড়িয়েছে। কৃষকরা জানাচ্ছেন, ওই সব নেতা-নেত্রীর কথায় প্রভাবিত হয়েই সমিতির প্রতিনিধির কাছে তাঁরা ধান বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ধান কেনার শিবিরেও ওই নেতা-নেত্রী-জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
লালগড়, ধরমপুর ও সিজুয়া তথা কাঁটাপাহাড়ি অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বক্তব্য, টাকা না পেলে আগামী সোমবার, ১ অগস্ট তাঁরা বিডিও অফিস ঘেরাও করে মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করবেন। আর ১৫ অগস্ট থেকে এই এলাকায় পথ অবরোধ করে, দোকান-বাজার-সরকারি অফিসে তালা দিয়ে
এবং রাস্তা কেটে ও গাছ ফেলে আন্দোলন শুরু হবে। যেমনটা শুরু হয়েছিল ২০০৮-এর ৬ নভেম্বর।
সেই আন্দোলনের ধাত্রীভূমি বলে পরিচিত, লালগড়ের দলিলপুর চক থেকেই এ বারও রাস্তায় নামার কথা তাঁরা বলেছেন।
কাঁটাপাহাড়ি গ্রামের কৃষক যদুপতি প্রতিহারের কথায়, ‘‘আর বড়জোর দিন পনেরো দেখব। তার পর লালগড় আন্দোলনের কথা ফের মনে করিয়ে দেব।’’ বামাল গ্রামের নির্মল মণ্ডল বলছেন, ‘‘কে আসল কে নকল আমরা কী করে বুঝব? আন্দোলনে নামা ছাড়া আমাদের সামনে আর পথ খোলা নেই।’’ গত ২২ জুলাই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায়কে লেখা একটি চিঠিতে লালগড়ের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৩৮ জন কৃষক জানিয়েছেন, ধান বিক্রির টাকা দ্রুত ফেরত না পেলে তাঁরা সপরিবারে আত্মহত্যা করবেন।
সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে যিনি ধান কিনেছেন, সেই প্রশান্তকুমার খান বেপাত্তা। গোপীবল্লভপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো বলেন, ‘‘প্রশান্ত খানকে আমিও কয়েক বার ফোন করেছিলাম। পাইনি। লালগড়ের কৃষকদের দুরবস্থার কথা শুনেছি। আমাদের দলেরই কেউ কেউ এর মধ্যে আছে। দেখছি, কী করা যায়।’’ তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায়ের কথায়, ‘‘চাষিদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। ওঁদের আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করব।’’