শেষ মুহূর্তে খতিয়ে দেখা নিরাপত্তা ব্যবস্থা।—নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর ১০০তম জেলার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠককে ঘিরে বর্ধমানে কার্যত উত্সবের মেজাজ।
তবে শুরুটা হয়েছে অনেক আগে থেকেই। সিঙ্গুর, ধনেখালি এলাকায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধার ঢেকে গিয়েছে তৃণমূলের পতাকায়। মুখ্যমন্ত্রীর কাটআউট থেকে ফেস্টুন বা ফ্লেক্স— বাদ যায়নি কিছুই। সেই সব ফেস্টুনে স্থানীয় বিধায়ক থেকে জেলা পরিষদ— সরকারের সাফল্য বর্ণনা করেছে সবাই। পালশিট মোড় থেকে বর্ধমান শহরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এই গোটা রাস্তাটাই কার্যত তেরঙায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, নির্ম বাংলা— কী নেই সেখানে। সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর অজস্র ছবি এবং কাটআউট।
বর্ধমান শহরেরও ভোল পাল্টে গিয়েছে। বর্ধমান বাইপাস থেকে শহরে ঢোকার রাস্তা চেনার উপায় নেই। নতুন করে পিচ পড়েছে সে রাস্তায়। পুরো রাস্তাটাই সেজে উঠেছে তোরণে, পতাকায়, ফেস্টুনে, ব্যানারে।
মুখ্যমন্ত্রীর বুধবারের এই বৈঠককে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে প্রায় দেড় হাজার পুলিশকর্মী। বাঁকুড়া, বীরভূম, মেদিনীপুর-সহ অন্য বেশ কয়েকটি জেলা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে তাঁদের। বর্ধমানের রাস্তায় তাই পুলিশ এবং কম্যান্ডো বাহিনীর জওয়ানদের ভিড়। সঙ্গে অজস্র লাল-নীল বাতির গাড়ি।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকটি শুরু হওয়ার কথা দুপুর দু’টোয়। গত চার বছর ধরে বাকি বৈঠকগুলি সেই অর্থে প্রকাশ্যে হয়নি। এ বার কিন্তু, গোটা বৈঠকটির লাইভ সম্প্রচার হবে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। এই বৈঠকের পর বিকেল চারটের সময় জেলার পুলিশ লাইনে মুখ্যমন্ত্রীর অন্য একটি অনুষ্ঠান রয়েছে। বর্ধমানে প্রসাসনিক বৈঠকের পাশাপাশি এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জেলার প্রশাসনিক কার্যালয়টিকে আইএসও সার্টিফিকেটের আওতায় আসার কথা ঘোষণা করবেন। এ ছাড়া একটি মোবাইল অ্যাপসও উদ্বোধন করবেন তিনি।
এই বৈঠক উপলক্ষে এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ নবান্ন থেকে বেশ কয়েকটি ভলভো বাস রওনা হয়েছে বর্ধমানের উদ্দেশে। ওই বাসে সচিব-আমলা এবং অন্য প্রতিনিধিদের পাশাপাশি সাংবাদিকরাও রয়েছেন।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই ১০০তম প্রশাসনিক বৈঠক নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। তাদের দাবি, জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করাই সার। গত চার বছরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় খুন-খারাপি, রাজনৈতিক হিংসার সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। গত ছ’মাসেই রাজ্যে খুন হয়ে গিয়েছে ৫৬৯টি। যার মধ্যে ৩৮টি ‘রাজনৈতিক’ খুন, আর ১২টি হয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে। শিল্প সেই অর্থে কিছুই হয়নি। আইনশৃঙ্খলা এবং শিল্প পরিকাঠামো নিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী কী বলেন রাজ্যবাসী আপাতত সেই দিকেই তাকিয়ে।
তবে, আগামী বছরেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সেই কারণে বর্ধমানেই সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রীর ১০০তম তথা শেষ প্রশাসনিক বৈঠক। এর পর থেকে এই সফরগুলি রাজনৈতিক সফরে বদলে যেতে পারে বলে রাজনীতির কারবারীদের একাংশের ধারণা।