লাইসেন্স নবীকরণ করায়নি ১২৭টি ক্লিনিক

স্বাস্থ্য দফতরের কোনও লাইসেন্স ছাড়াই বর্ধমান শহরের খোসবাগানের ভিতরে রমরমিয়ে একটি প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিক বেশ চলছিল। সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্মী পরিচিত এক জনকে ওই ক্লিনিকে আলট্রা সোনোগ্রাফি (ইউএসজি) করাতে গিয়ে ‘বেনিয়ম’ বুঝতে পারেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৮ ০২:৪৮
Share:

স্বাস্থ্য দফতরের কোনও লাইসেন্স ছাড়াই বর্ধমান শহরের খোসবাগানের ভিতরে রমরমিয়ে একটি প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিক বেশ চলছিল। সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্মী পরিচিত এক জনকে ওই ক্লিনিকে আলট্রা সোনোগ্রাফি (ইউএসজি) করাতে গিয়ে ‘বেনিয়ম’ বুঝতে পারেন।

Advertisement

পূর্ব বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বিষয়টি জেনে খোঁজখবর করার পরে জানতে পারেন, ওই ক্নিলিকের লাইসেন্স গত বছর অক্টোবরেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, ওই ক্লিনিকের মতোই বর্ধমান শহর এবং জেলায় গোটা ১২টি ইউএসজি ও সিটি স্ক্যান ক্লিনিক-সহ ১২৭টি প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিক লাইসেন্স-হীন অবস্থায় চলছে বলে স্বাস্থ্য দফতর জেনেছে।

এ দিন সন্ধ্যায় নিজের দফতরে বসে প্রণববাবু বলেন, “আমরা সাধারণত লাইসেন্স রয়েছে, এমন ক্লিনিকগুলিতেই নিয়মিত পরিদর্শন করি। লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ না হলে ক্লিনিক বন্ধ রাখাটাই নিয়ম। অভিযোগ পাওয়ার পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারছি, ১২৭টি ক্লিনিকের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ আমরা করিনি। অথচ ওই ক্লিনিকগুলি রমরমিয়ে চলছে।” তাঁর নির্দেশ, তদন্ত করে বর্ধমান শহরের ওই ক্লিনিক-সহ সব ক্লিনিকেই তালা ঝুলিয়ে দিতে হবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানে ১০৭টি ইউএসজি ক্লিনিক রয়েছে। যার মধ্যে বর্ধমান শহরেই রয়েছে অর্ধেকের বেশি। এ ছাড়াও এমআরআই, সিটি স্ক্যান-সহ অন্যান্য পরীক্ষার জন্যেও বেশ কয়েকটি ক্লিনিক রয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় ২৬৮ টি নানা রকম পরীক্ষার ক্লিনিক রয়েছে।

Advertisement

শহরের ক্লিনিকগুলি নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠেছে। মাঝেমধ্যেই ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট’ না মানার জন্যে এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র না থাকার জন্যে বিশেষ করে ইউএসজি ক্লিনিকগুলি বন্ধ করে দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। অনেক সময় নিয়ম মেনে মোটা টাকা জরিমানা করে সতর্কও করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, সোমবার খোসবাগানের একটি নামী প্রতিষ্ঠান বিনা লাইসেন্সে ক্লিনিক চালাচ্ছে অভিযোগ ওঠার পরে স্বাস্থ্য দফতরের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। দফতরের এক কর্তার কথায়, “স্বাস্থ্য দফতরের নাকের ডগায় ওই প্রতিষ্ঠান যদি বিনা লাইসেন্সে ক্লিনিক চালায়, তা হলে গ্রামীণ এলাকায় কী হচ্ছে, ভেবেই মাথা খারাপের জোগাড়।” সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক শহরের আটটি ক্লিনিক বন্ধ করেছিল। তার পরেই জেলার বিভিন্ন ক্লিনিকের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বলা হয়, ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ প্রতিরোধ আইন (পিসিপিএনডিটি অ্যাক্ট) অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্টের শংসাপত্র থাকা বাধ্যতামূলক।

প্রণববাবুর দাবি, “কে কোথায় বেআইনি ভাবে ক্লিনিক চালাচ্ছে, সেই খবর তৎক্ষণাৎ তো পাওয়া যায় না। অভিযোগ পাওয়ার পরেই খতিয়ে দেখা হয়। তার পরে তালা ঝোলানোর ব্যবস্থাও করা হয়।” বর্ধমানের যে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেটির সেটির কর্ণধার, সল্টলেকের বাসিন্দা শুভময় নাগের দাবি, “লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। তার পর কী হয়েছে জানি না। অনেক সময় লাইসেন্স পেতে ১০ মাসও সময় লাগে। এ ভাবে চললে কি ব্যবসা বন্ধ করে দেব?’’ তবে তাঁর সংযোজন, স্বাস্থ্য দফতর যে ভাবে নির্দেশ দেবে, তাই মানা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন