টাকার অভাবে উন্নয়নের নানা কাজ করা যাচ্ছে না, অনেক সময়েই অভিযোগ করে থাকেন বিভিন্ন দফতরের কর্তারা। অথচ, গত দু’টি অর্থবর্ষে উন্নয়নের খাতে বরাদ্দের টাকা খরচ করতে না পারায় পূর্ব বর্ধমান থেকে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ফেরত চলে গেল রাজ্য অর্থ দফতরে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “রাজ্য সরকারের নির্দেশে ওই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। কী কারণে টাকা বিভিন্ন দফতরে পড়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হবে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পুজোর আগে রাজ্য অর্থ দফতর নির্দেশিকা দেয়, ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাজ্য উন্নয়নের কাজে যে টাকা বরাদ্দ করেছিল, বিভিন্ন জেলায় তার একটি অংশ পড়ে রয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরাতে বলা হয়েছিল। তবে পরে সেই মেয়াদ বাড়িয়ে জানুয়ারি করা হয়। নির্দেশ আসার পরেই জেলার কোষাগারে টাকা জমা পড়তে থাকে।
জেলা কোষাগারের এক আধিকারিকের কথায়, “বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ (বিডিএ), জেলা পরিষদ, বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতি, বর্ধমান পুরসভা, জেলাশাসকের দফতরও টাকা ফেরত দিয়েছে। সব মিলিয়ে, ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কোষাগারে জমা পড়া ১৩ কোটি ৭ লক্ষ টাকা রাজ্যের কোষাগারে জমা পড়েছে। মনে করা হচ্ছে, উন্নয়নের খাতে জেলায় আর বেশি টাকা পড়ে নেই।” প্রশাসন সূত্রের খবর, কেন্দ্রের অনুদানের টাকা চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত খরচ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সময়ের মধ্যে খরচ করতে না পারলে সেই টাকাও ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা কোষাগারে সবচেয়ে বেশি টাকা জমা দিয়েছে বিডিএ। তার পরিমাণ ৫ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। তার পরেই রয়েছে জেলা পরিষদ। ২ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছে তারা। জেলার ২৩টি পঞ্চায়েত সমিতি থেকেও এক কোটির বেশি টাকা জমা পড়েছে। এ ছাড়াও টাকা জমা দিয়েছে মৎস্য দফতর, গ্রন্থাগার বিভাগ, জেলাশাসকের দফতর-সহ ১২টি দফতর। প্রশাসনের কর্তারা জানান, নানা দফতরের কর্তারা টাকা আটকাতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অডিটের জন্য বিশেষ দল পাঠানোর হুঁশিয়ারি আসায় আর ঝুঁকি নেননি কেউ।
উন্নয়নের কাজের টাকা ফেরত যাওয়ায় পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়ছে শাসকদল ও জেলা প্রশাসন। প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকারের কটাক্ষ, “মুখে উন্নয়নের বুলি, বাস্তবে যে ফাঁকা কলসির আওয়াজ— এই টাকা ফেরত যাওয়া তার প্রমাণ। এর সঙ্গে আবার রয়েছে কাজের নামে লুঠ।” বিজেপি-র সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান) সন্দীপ নন্দীর মন্তব্য, ‘‘দুর্নীতি করতেই ব্যস্ত, উন্নয়ন করবে কী!”
জেলা সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা দেবু টুডু অবশ্য বলেন, “ই-টেন্ডারের জন্যই উন্নয়নের খাতে বরাদ্দের চেয়ে কম টাকা খরচ করা গিয়েছে। সে জন্যই বাড়তি টাকা পড়ে ছিল। তা রাজ্য সরকার ফেরত চেয়েছে। উন্নয়ন হচ্ছে কি না, তা আমজনতা জানে।”