ছাত্রের মৃত্যু, রেল পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ

কলেজে যাওয়ার সময় চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল বি.কম দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের। সোমবার সকালে পূর্ব রেলের আসানসোল রেল ডিভিশনের সীতারামপুর স্টেশনের ঘটনা। আসানসোল রেল পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সমির খান (১৭)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

সমির খান

কলেজে যাওয়ার সময় চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল বি.কম দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের। সোমবার সকালে পূর্ব রেলের আসানসোল রেল ডিভিশনের সীতারামপুর স্টেশনের ঘটনা। আসানসোল রেল পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সমির খান (১৭)। তাঁর বাড়ি কুলটি থানার সীতারামপুরের বিশ্বকর্মা পাড়ায়।

Advertisement

এ দিন দুর্ঘটনার পরে দেহ তুলতে দেরি হওয়ায় রেল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সীতারামপুর একটি জংশন স্টেশন। এই লাইন দিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময়ে একাধিক মেল এক্সপ্রেস ও প্যাসেঞ্জার চ্রেন চলাচল করে। প্যাসেঞ্জার ছাড়াও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মেল এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ রয়েছে। বহু রেলযাত্রী ওঠানামা করেন। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়। অথচ এখানে সর্বক্ষণের জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স থাকে না। নেই ডোমও। প্রয়োজন পড়লে আসানসোল থেকে ছুটিয়ে আনতে হয়। রেলের স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির পরিকাঠামোরও উন্নয়ন করা হচ্ছে না। অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন ডিআরএম প্রশান্তকুমার মিশ্র।

রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল প্রায় ৭টা নাগাদ সীতারামপুর রেল স্টেশনে বেরেলি প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরার জন্য আসেন সমির খান। কিন্তু তিনি স্টেশনে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই ট্রেন ছেড়ে দেয়। চলন্ত ট্রেনেই ওঠার চেষ্টা করেন সমীর। ঠিক মতো পাদানির নাগাল না পেয়ে তিনি বেসামাল হয়ে রেল লাইনে পড়ে যান। ট্রেন চলে যাওয়ার পরে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য যাত্রীরা তাঁকে দ্বিখন্ডিত অবস্থায় দেখতে পান। তাঁরাই স্টেশন ম্যানেজারের দফতরে খবর পাঠান। স্টেশন ম্যানেজার আরএস যাদব-সহ কর্তব্যরত অন্য অফিসারেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। দেহটিও স্টেশনে তোলার তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু স্টেশনে ডোম ও অ্যাম্বুল্যান্স না থাকায় দেহ তুলতে দেরি হতে থাকে। ফলে এলাকার বাসিন্দাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। তাঁরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। যত দ্রুত সম্ভব ডোম ও অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে পাঠিয়ে দেহ তোলার দাবি তোলা হয়। সকাল পৌনে ন’টা নাগাদ আসানসোল থেকে ডোম ও অ্যাম্বুল্যান্স ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পরে দেহ তুলে ময়না তদন্তে পাঠানো হয়।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা সন্তোষ বর্মা, নিখিল বিশ্বকর্মা বলেন, ‘‘আমরা রেল কর্তৃপক্ষের কাছে এই সমস্যাগুলির সমাধান চেয়ে অনেকবার দরবার করেছি। সাধারণ রেল যাত্রীদের স্বার্থেই এগুলি পূরণ করা উচিত। অথচ কোনও হেলদোল নেই।’’ এ প্রসঙ্গে আসানসোলের ডিআরএম প্রশান্তকুমার মিশ্র জানিয়েছেন, সাধারণত ছোট স্টেশনে অ্যাম্বুল্যান্স রাখা হয় না। আসানসোল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে এলাকা থেকে ভাড়া করা হয়। প্রয়োজনে ডোমও আসানসোল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘সীতারামপুরের ঘটনা বিষয়ে খোঁজ নেব। তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের সমস্যা যেন না হয়, তা দেখা হবে।’’

মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাইথনের একটি ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ছিল সমির। এলাকায় দুর্ঘটনার খবর পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে। বিশ্বকর্মা পাড়াতেই একটি চায়ের দেকান রয়েছে মৃতের বাবা সালিম খানের। তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। কান্না চেপে কোনও মতে জানালেন, বাড়ি থেকে মাত্র তিনশো মিটার দূরেই সীতারামপুর স্টেশন। তাঁর ছেলে প্রতিদিন হেঁটেই স্টেশনে পৌঁছে ট্রেন ধরে কলেজে যেতেন। ঝাড়খণ্ডের কুমারডুবি স্টেশনে নেমে অটো ধরে কলেজে পৌঁছতেন। সোমবারও একই ভাবে কলেজে যাচ্ছিলেন সমির। সালিম খান বলেন, ‘‘এ দিন এমনটা হবে ভাবতে পারছি না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন