ফের কঙ্কাল পূর্বস্থলীতে

একসময় লাশ গায়েব হলেই খোঁজ পড়ত পূর্বস্থলীতে। ভাগীরথীর জলে লাশ পচিয়ে কঙ্কাল পাচারের চক্রের এতটাই রমরমা ছিল। মাঝে অবশ্য কয়েক বছর কারবার ও কারবারি দুইয়েরই তেমন পাত্তা পাওয়া যায়নি। তবে চক্র যে চলছিলই তার প্রমাণ মিলল আবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭ ০০:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি

একসময় লাশ গায়েব হলেই খোঁজ পড়ত পূর্বস্থলীতে। ভাগীরথীর জলে লাশ পচিয়ে কঙ্কাল পাচারের চক্রের এতটাই রমরমা ছিল। মাঝে অবশ্য কয়েক বছর কারবার ও কারবারি দুইয়েরই তেমন পাত্তা পাওয়া যায়নি। তবে চক্র যে চলছিলই তার প্রমাণ মিলল আবার। পূর্বস্থলীর দুটি বাড়ি থেকেই প্রায় ১৮টি নরকঙ্কাল উদ্ধার করল পুলিশ।

Advertisement

নন্দ কলোনির ওই দুই বাড়ি থেকে খুলি, দেহের নানা অংশের হাড়গোড় মিলেছে। বাড়ির মালিক তথা কঙ্কাল কারবারের দুই মূল অভিযুক্তের খোঁজ না মিললেও তাদের চার শাগরেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খোঁজ চলছে ওই দুই ভাই তাপস পাল ওরফে তপসা ও মনোজ পাল ওরফে গপসারও। যদিও মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিকের আক্ষেপ, জঘন্য কারবার হলেও আইন তেমন কড়া না হওয়ায় সহজেই ছাড়া পেয়ে যায় এরা। ফের নেমে পড়ে কারবারে।

পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাত ন’টা নাগাদ ওই দুই ভাইয়ের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। নজরে আসে বাড়ির নানা জায়গায় লুকনো ব্যাগ, পোঁটলা। খুলতেই মেলে ওষুধ দেওয়া কঙ্কাল। সব থেকে বেশি হাড়গোড় মেলে মনোজের বাড়ির ছাদ থেকে। তাপসের বাড়ির বারন্দায় রাখা দুটি পোঁটলা থেকে পচা গন্ধ বেরনোয় সেগুলি না খুলেই থানায় আনে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, ওগুলিতে দু’এক দিন আগেই পুরোপুরি না শুকনো কঙ্কাল আনা হয়েছিল। পুলিশের দাবি, প্রতিটি পোঁটলাতেই একটি করে মাথার খুলি ও এক জন মানুষের দেহের বেশির ভাগ বাড় মিলেছে। উদ্ধার হয়েছে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের ড্রাম, আঠা, কোদাল-সহ কঙ্কাল তৈরির নানা সরঞ্জামও। পুঁটলিগুলি পাচারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল বলেও পুলিশের অনুমান।

Advertisement

পুলিশের দাবি, তপসা ও গপসার নাম আগেও কঙ্কাল পাচারে জড়িয়েছে। অন্যত্র কঙ্কাল তৈরি করে ওই বাড়িতে তা মজুত করে বিক্রি করা হতো বলেও প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। পূর্বস্থলীর মেড়তলায় তপসার কারখানা ও কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে গপসার কঙ্কার তৈরির কারখানা রয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্রের খবর। পুলিশের দাবি, বিভিন্ন শ্মশান থেকে আধপোড়া এবং কবর থেকে চুরি করা দেহ কারবারিরা প্রথমে ভাগীরথীর জলে দিন সাতেক চুবিয়ে রাখে। দেহের পচন শুরু হলে হাড় থেকে মাংস আলাদা করে অ্যাসিড দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজেই মূলত এগুলির চাহিদা রয়েছে। আবার কিছু কঙ্কাল বিদেশেও পাচার হয় বলে জানা গিয়েছে।

এর আগেও পূর্বস্থলীর বেলেরহল্ট স্টেশনের কাছে কঙ্কাল তৈরির কারখানার হদিস পায় পুলিশ। দু’বার গ্রেফতার করা হয় মুক্তি বিশ্বাস নামে ওই কারবারিকে। মুক্তির মৃত্যুর পরে তার শাগরেদরা নানা জায়গায় ছড়িয়ে ব্যবসা চালাতে শুরু করে বলে জানা গিয়েছে। প্রথমে নদীতে ভেসে আসা মৃতদেহ আটকে চলত কারবার। পরবর্তীতে চাহিদা বাড়ায় শ্মশান এবং কবরস্থান থেকেও দেহ লোপাটের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ।

বছর তিনেক আগে কালনার তৎকালীন এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ সরকার দেবনগর এলাকায় একটি কঙ্কাল তৈরির কারখানার হদিস পান। গ্রেফতার করা হয় দু’জনকে। পুলিশের দাবি, কিছুদিন পর পর নদীঘাটের জেরা বদলায় কারবারিরা। ফলে কখনই পুরোপুরি বন্ধ করা যায় না। এসডিপিও প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘‘মূল অভিযুক্ত দু’জন পলাতক। তবে শাগরেদ রাখি পাল, যমুনা পাল, মিঠু দে ও নকুল চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্ত চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন