ভোল বদলাবে এই রাস্তার। মেহেদিবাগানে তোলা নিজস্ব চিত্র।
পিচের প্রলেপ কবেই উঠেছে। রাস্তা এখন খানাখন্দে ভরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পূর্ত দফতরের মুখ্য সচিব ইন্দিবর পান্ডে, জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন, পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত ও পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেখানে ঠিক হয়, পুরনো জিটি রোডকে চার লেন করা হবে। ঢেলে সাজা হবে ওই রাস্তা। যদিও বৈঠকেই বহু টাকা খরচ করে জিটি রোডে বসানো ত্রিফলা বাতিগুলির কী হবে, বাসস্টপ করার যে টাকা মিলেছে তার কী হবে— এ সমস্ত প্রশ্ন তোলেন পুরপ্রধান। পূর্ত দফতরের সচিব অবশ্য আলোগুলি খুলে অন্য কোথাও ব্যবহার করার পরার্শ দেন।
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুটি পর্যায়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করে জিটি রোডের প্রসার ও সৌন্দর্যায়ন করা হবে। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছানুসারে শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়া জিটি রোডের উল্লাস মোড় থেকে নবাবহাট মোড় পর্যন্ত রাস্তা চওড়া ও সৌন্দর্যায়ন করা হবে।”
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে উল্লাস মোড় থেকে বীরহাটা ও নবাবহাট থেকে লক্ষ্মীপুর মাঠ পর্যন্ত কাজ শুরু করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করার নির্দেশও দেন পূর্ত দফতরের মুখ্য সচিব। সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাস্তার উপর দখলকারীদের সরিয়ে দিয়েই কাজে নামবে পূর্ত দফতর।
পূর্ত দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে নবাবহাট থেকে উল্লাস পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা কমবেশি ১০ মিটার চওড়া রয়েছে। চার লেন করার জন্য ওই রাস্তা ১৪ মিটার চওড়া করতে হবে। ওই রাস্তার বেশিরভাগ অংশে ডিভাইডার নেই। চওড়া হওয়ার পরে পুরো রাস্তা জুড়েই ১ মিটারের বেশি এলাকায় ডিভাইডার থাকবে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের মতো ডিভাইডারে ছোট ছোট গাছ লাগানোর কথাও ভাবা হয়েছে। যাতে উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ির আলোর ছটায় চালক বিভ্রান্ত না হয়ে পড়েন। এ ছাড়াও ত্রিফলা, পথবাতি থাকবে তেমনি রাস্তার দু’ধারে বেশ কয়েকটা বাসস্টপ, ফুটপাথ ও নিকাশি নালা তৈরি করবে পূর্ত দফতর। দফতরের এক কর্তা বলেন, “বয়স্কদের বসার জন্য ছোট ছোট বেঞ্চ বসানো যায় কি না, সে চিন্তাও চলছে।”
কিন্তু জিটি রোড সম্প্রসারণের পিছনে শুধুই মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে, না কি অন্য কারণও আছে? পূর্ত দফতরের একাধিক কর্তার জানান, শহরের কাটোয়া রোডে চার লেনের ওভারব্রিজ হচ্ছে। শহর ছাড়িয়ে তালিতেও ওভারব্রিজ হবে। ফলে চার লেনের গাড়ি সামলানোর জন্য জিটি রোডকেও চার লেন করা আবশ্যিক। পূর্ত দফতর ও পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, শহরের ভিতর গাড়ির চাপ বাড়ায় যানজট হচ্ছে, বাড়ছে দুর্ঘটনা। ফলে ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখতে জিটি রোড চার লেনের হওয়া খুবই জরুরি। ওই রাস্তায় সাইকেল বা ধীরগতির গাড়ির জন্য আলাদা পথ রাখার কথাও ভাবা হয়েছে।
বৈঠকে পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত প্রশ্ন করেন, “বর্ধমান পুরসভা সওয়া এক কোটি টাকা খরচ করে জিটি রোডের দু’ধারে ত্রিফলা লাগিয়েছে। বীরহাট থেকে স্টেশন পর্যন্ত সৌন্দর্যায়ন শুরু করা হয়েছে। এ সমস্ত কাজের কী হবে?’’ এ ছাড়া সাংসদ তহবিল থেকে ১২টি বাসস্টপ করার জন্য যে ৫০ লক্ষ টাকা মিলেছে, কাজ করতে না পারলে টাকা ফেরত চলে যাওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। পূর্ত সচিবের অবশ্য যুক্তি, ত্রিফলাগুলিকে খুলে ফেলতে হবে। ওই ত্রিফলা বর্ধমান শহরে অন্য কোথাও ব্যবহার করা যেতে পারে। আর সাংসদ তহবিলের টাকাতে অন্য কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। কারণ পূর্ত দফতর জিটি রোডের দু’ধারে ওই সব কাজ এমনিই করে দেবে। পুরপ্রধানের যদিও দাবি, “বীরহাটা থেকে স্টেশন পর্যন্ত সৌন্দর্যায়নের কাজ আমাদের করতে বলা হয়েছে।”
বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, জাতীয় সড়ক লাগোয়া শহরের কথাও নতুন সার্কিট হাউস তৈরি হবে। আসানসোল ও দুর্গাপুরের সার্কিট হাউসগুলিও সংস্কার করা হবে।