প্রতীকী ছবি।
কোনও পড়ুয়া বই কিনতে পারেনি? তিনি আছেন। কেউ স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি? ভরসা তিনি-ই।
তিনি পূর্ব বর্ধমানের গলসির সাঁকো চন্দ্রশেখর উচ্চবিদ্যালয়ের ‘হেডস্যার’ বাসুদেব চক্রবর্তী।
অভিভাবদ থেকে পড়ুয়া, সবার ‘মুশকিল আসান’ তিনি।
সূত্রের খবর, বর্ধমানের কাজিরহাটের বছর আটচল্লিশের এই শিক্ষক এ বছর অন্তত ২৫০ পড়ুয়ার ভর্তির ফি দিয়েছেন। স্কুলে এসে মিড-ডে মিল রান্নার জায়গা, স্কুল চত্বর নিজের হাতে সাফাই করেন। পড়ুয়াদের শেখান, কী ভাবে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা রাখতে হয়। শিক্ষা দফতর জানায়, পড়ানোর সঙ্গেই এমন সব কারণে আজ শিক্ষক দিবসে ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার পাওয়ার কথা তাঁর। ১,৭০০ পড়ুয়ার স্কুলে ‘হে়ড স্যারের’ ফ্যান অসংখ্য।
১৯৯০ সালে এই স্কুলে ইংরেজির সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বাসুদেববাবু। ২০০৬ সালে প্রধান শিক্ষক হন। তারপর থেকেই টাকার অভাবে কোনও ছাত্রছাত্রী যাতে স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে না থাকে, সে দিকে কড়া নজর তাঁর। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলেন, “কোন ক্লাসে পড়া কত দূর এগোল, সেটাও যেমন স্যার জানেন, কোন ছাত্র টানা অনেক দিন কামাই করছে, সেটাও নখদর্পণে।”
অভিভাবকদের একটা বড় অংশ এবং গ্রামের বাসিন্দা নির্মল রায় আচার্য, ধর্মদাস দিগরেরা জানাচ্ছেন, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা (কলেজ পড়ুয়া হলেও), স্কুলপড়ুয়াদের পোশাক কেনার টাকা, এমনকী, মেয়ের বিয়ে—বাসুদেববাবুর কাছে সাহায্যে চাইতে গেলে একেবারে খালি হাতে ফিরতে হয় না।
বাসুদেববাবুর বাড়িতে রয়েছেন আংশিক সময়ের কলেজ শিক্ষিকা স্ত্রী মধুঋতাদেবী ও দশম শ্রেণির ছাত্র ছেলে স্মরণাভ। মধুঋতাদেবী বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা, স্কুল—ওঁর জীবন। এমন লোকের পাশে না থাকলে চলে!’’ ঘরে-বাইরের প্রশংসায় গুরুত্ব দিতে নারাজ বাসুদেববাবু। বলেছেন, “আমার বাবা ক্ষিতীশ চক্রবর্তী এক সময় এই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক ছিলেন। যখন বাবার চেয়ারে বসার সুযোগ পাই, ঠিক করি—টাকার অভাবে কারও পড়া বন্ধ হতে দেব না। সেই চেষ্টাটুকুই করছি।’’