—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয় যত জন ছাত্রী, তার অর্ধেকও মাধ্যমিক পর্যন্ত পৌঁছয় না। এমনই ছবি পূর্ব বর্ধমানে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো জনমুখী প্রকল্পের পরেও পড়ুয়াদের আটকে রাখা যাচ্ছে না কেন, মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর মুখে সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শিক্ষকদের একাধিক সংগঠন থেকে শিক্ষাবিদদের দাবি, প্রকল্পের সুবিধা দিতে সরকার যতটা আগ্রহী, ছাত্রীদের ধরে রাখার জন্য স্কুলের পরিকাঠামোগত সুবিধা গড়ে তোলার বিষয়ে ততটা আগ্রহী নয়। এই বৈষম্যের জন্যই মাধ্যমিকের আগে নানা কারণে পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ছাত্রীরা। আজ, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে ৪১,৬১৬ জন। তার মধ্যে ২৩,৫৩৪ জন ছাত্রী।
কেন্দ্র ও ইউনেস্কোর যৌথ ‘জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার’ (এনএইচএফএস-৫) রিপোর্ট অনুযায়ী, পূর্ব বর্ধমান জেলায় ছ’বছরে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয় মোট বালিকার ৭১.২%। আর মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে দেখা যাচ্ছে, ২৭.৩% ছাত্রী জীবনের বড় পরীক্ষায় বসছে। অথচ রাজ্যের নিরিখে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হচ্ছে ৭৬.৮%, আর দশম শ্রেণির পরীক্ষায় বসছে ৩২.৯%। শিক্ষাবিদ রথীন মল্লিকের দাবি, “নানা প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে ছাত্রীদের মধ্যে পড়ার আগ্রহ বেড়েছিল। কিন্তু কর্মসংস্থান হচ্ছে না দেখে অভিভাবকেরা পড়ায় জোর করেন না। ফলে, প্রকল্পের সুবিধা নিলেও আদতে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।”
জামালপুরের একটি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সাবিনা সুলতানার দাবি, “যে পরিবারের মেয়েরা স্কুলে প্রথম যাচ্ছে, তারা পড়ার চেয়ে বাড়ির কাজে বেশি উৎসাহী। শিক্ষার অধিকার আইনে নবম শ্রেণি পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে সবাই। তার পরেই পরীক্ষার চাপ পড়ছে, আর স্কুলে আসা ছেড়ে দিচ্ছে।”
‘অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস’ সংগঠনের জেলার সম্পাদক অনির্বাণ দাশগুপ্ত মনে করেন, সরকারি প্রকল্পের সুবিধার জন্য ছাত্রীরা স্কুলমুখী হয়েছিল। কিন্তু আসলে পড়াশোনায় আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না। ফলে, প্রথম থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত ছাত্রীদের সংখ্যার বৈষম্য দেখা যাচ্ছে।”
শিক্ষকদের একাংশ মনে করেন, শিক্ষার প্রসারে স্কুলের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ করা জরুরি। সেখানে প্রকল্প বিস্তারে জোর দেওয়া হলেও স্কুলের উন্নয়নের দিকে ততখানি নজর নেই। ফলে, ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকার যে নিবিড় সম্পর্ক বা নজরদারি থাকে তা অনেকটাই কমে গিয়েছে। তার ফলে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির ছাত্রীরা প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার পরে আর স্কুলমুখী হচ্ছে না। ওই সংগঠনের সভাপতি রূপক রায়ের দাবি, “কোভিড পর্বের পরে অভ্যাসটাই হারিয়ে গিয়েছে। আমরা আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবক, ছাত্রীদের স্কুলে আসার জন্য বলছি। কিন্তু অভিভাবকরা কাজের খোঁজে বাইরে থাকছেন, আর ছাত্রীকে রান্না করতে হচ্ছে!”
এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক সুদীপ্ত গুপ্তর দাবি, “প্রকল্পের প্রচারে সরকার যতটা উদ্যোগী, নাবালিকা বিয়ে রুখতে ততটা নয়। সে জন্যই যত ছাত্রী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়, মাধ্যমিকের আগে বেশির ভাগ জনই পড়া ছেড়ে দেয়।”
তৃণমূলের মাধ্যমিক শিক্ষা সমিতির সভাপতি তপন দাস অবশ্য বলেন, “বাংলা শিক্ষা পোর্টাল অনুযায়ী স্কুলছুট নেই। এটা একটা সামাজিক ব্যাধি। তা আটকাতেই সরকার নানা প্রকল্প নিয়েছে। তার সুফলও
পাওয়া যাচ্ছে।”