গঙ্গাটিকুরির ভট্টাচার্য বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
ছোট্ট অর্ধবৃত্তাকার নাটমন্দির। তার দু’দিকে ভগ্নপ্রায় দুটি দেওয়াল যেন বনেদিয়ানা ও ঐতিহ্যের স্বাক্ষী। সেই নাটমন্দিরেই ২০০ বছর ধরে চলে আসছে ভট্টাচার্য বাড়ির কালীপুজো। দুর্গাপুজে মিটতেই কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুরি গ্রামে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় এ পুজোর।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, সময়টা প্রায় চারশো বছর আগে। বর্ধমানের রাজার খাজাঞ্চি রায় বংশের বড়রায় তখন রাজার স্নেহধন্য ছিলেন। বাণিজ্য করতে এসে গঙ্গার ধারের জায়গাটি পছন্দ হওয়ায় সেখানে বসতি গড়ে তোলা অনুরোধ করেছিলেন রাজাকে। রাজার অনুমতিতে গঙ্গাটিকুরি গ্রামে জমিদারির পত্তন করেন তিনি। শোনা যায়, বংশে কোনও সন্তান না হওয়ায় ওই বংশেরই এক পূর্বপুরুষ নাটমন্দির-সহ তাঁদের সমস্ত সম্পত্তি ভিক্ষেপুত্র নিরোদবরণ ভট্টাচার্যকে দিয়ে যান। তারপর থেকেই ওই নাটমন্দিরে পঞ্চমুন্ডির আসনে কালীর আরাধনা শুরু করেন ভট্টাচার্য পরিবার। ছয় পুরুষ ধরে ওই কালীপুজো চলছে। মাঝে অবশ্য পঁচিশ বছর অর্থের অভাবে এই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। তবে পড়শি জমিদার বন্দোপাধ্যায় পরিবারের সাহায্যে ফের পুজো চালু হয়। নাটমন্দিরে তৈরি প্রতিমায় মাটির প্রলেপ দেন শিবলুনের গোপাল মিস্ত্রী। বংশ পরম্পরায় প্রতিমার চোখ আঁকার ও রং করার দায়িত্ব সামলান মিস্ত্রি পরিবারের সদস্যরাই। প্রতি অমাবস্যাতেই প্রতিমার বেদিতেই হয় কালীপুজো, ভোগের আয়োজন হয়।
জনা দু’য়েক পুরোহিত পুজোর দায়িত্ব সামলান। পুজোর শুরুতে বাড়ির বউরা পান, সুপারি দিয়ে প্রতিমাকে বরণ করেন। ভোগে দেওয়া হয় খিচুড়ি,লুচি, নাড়ু। প্রতিমা বিসর্জন হয় পাশের কাঁদরে। পুজোর দিন ও পরের দিন গ্রামের বাসিন্দাদের ভোগের আয়োজনও করা হয়। এই পরিবারের সদস্য পার্থ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্বল্প সামর্থ্যের মধ্যে প্রতি বছরই পুজোর আয়োজন করি। সারা গ্রামের মানুষ আমাদের বাড়ির পুজোয় যোগ দেন।’’