অণ্ডালের বহুলা হাইস্কুলে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে আবেদন জানাচ্ছেন মহিলারা। কোভিড-সতর্কতায় পালিত হচ্ছে দূরত্ববিধি। নিজস্ব চিত্র।
গত কয়েকদিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের পরিস্থিতি ভাল। উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়নি। জেলার বিভিন্ন শিবির ঘুরে এমনটাই দাবি করেছেন প্রশাসনিক কর্তারা। ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার তমোজিৎ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বুধবার পর্যন্ত জেলা জুড়ে এক লক্ষ ২৬ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে। তার মধ্যে ৯১ হাজার ১১৮ জন ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এ আবেদনপত্র পূরণ করেছেন। বৃহস্পতিবার জেলায় ২৬টি শিবির আয়োজিত হয়।
বিভিন্ন প্রকল্পে নাম তোলানোর জন্য রাজ্যবাসীকে তাড়াহুড়ো না করার বার্তা বুধবার দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তার পরেই মানুষজন কি ভিড় কম করছেন? তমোজিৎবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা রয়েছে। পাশাপাশি, জেলা প্রশাসনের তরফে কোভিড-বিধি মেনে শিবিরে আসার কথা মানুষজনকে বলা হয়েছে। সে প্রচারও করা হচ্ছে। এ ছাড়া, ভিড় কমাতে শিবিরের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর তাতেই কাজ হয়েছে বলে দাবি।
তবে ভিড় কম থাকলেও এ দিনই অনেক শিবিরে দূরত্ববিধি উপেক্ষিত হয়েছে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গি টিএন হাইস্কুলের শিবিরে দেখা যায়, বুধবারের মতো এ দিন হুড়োহুড়ি ছিল না। তবে পুলিশ বহু চেষ্টা করেও দূরত্ববিধি বজায় রাখতে পারেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার লাইন ঠিক করে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসছে। এরই মধ্যে স্কুল গেটের সামনে পড়ে যান এক মহিলা। তিনি বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফর্ম জমা দেব। শুভ কাজ আগে আগে করতে হয়।’’
এ দিকে, জামুড়িয়ার চিঁচুড়িয়া পঞ্চায়েতের উপেন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে সকাল ৯টা থেকে লাইনে দাঁড়াতে শুরু করেন আবেদনপ্রার্থীরা। দুপুর পর্যন্ত একে একে ৩,৭০০ আবেদনপত্র জমা পড়েছে বলে পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য মোট ৩৬টি কাউন্টার খোলা ছিল। এর মধ্যে শুধু ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর জন্যই ছিল ১৫টি কাউন্টার। জামুড়িয়া ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর জন্য ২,০১১টি আবেদন জমা পড়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (এলআর) সন্দীপ টুডু বেলা ১২টা নাগাদ শিবির পরিদর্শন করেন। পাণ্ডবেশ্বরের হরিপুর পঞ্চায়েতের সামনে ফাঁকা জায়গায় মণ্ডপ বানিয়ে শিবিরের আয়োজন করা হয়। এখানে এ দিন ৩,১৪৮টি আবেদনপত্র জমা হয়েছে। তার মধ্যে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর জন্য ২,০১০টি ফর্ম জমা পড়েছে বলে জানান পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গোপীনাথ নাগ।
কিন্তু শিবিরে এসে কোভিড-বিধি মানছেন না কেন? ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে আবেদনপত্র জমা দিয়ে আসা মালতি বাউরি, রেখা বেশরারা বলেন, ‘‘যতটা সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। কারণ, সকলেরই ধারণা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবেদনপত্র পূরণ করা জরুরি।’’ এ নিয়ে প্রশাসনের আরও কড়া হওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে শিবিরের দিন আরও বাড়ালে বিধিতে মানাতে রাশ টানা যাবে বলে তাঁদের ধারণা।
আসানসোলের আর্যকন্যা হাইস্কুলে ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবির। ‘উধাও’ দূরত্ববিধি। বৃহস্পরতিবার। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের দাবি, প্রত্যেকটি শিবিরের বাইরে পুর বা পঞ্চায়েতের সদস্যদের নেতৃত্বে দলের কর্মীরা স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেছেন। আবেদনপত্র পূরণ করা-সহ নানা প্রয়োজনীয় কাজে তাঁরা সহায়তা করেছেন। দুর্গাপুর পুরসভার ২ নম্বর বরো চেয়ারম্যান রমাপ্রসাদ হালদার বলেন, ‘‘মানুষজনকে আমরা বোঝাচ্ছি। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে কেউ বঞ্চিত হবেন না। অনেকেই আশ্বস্ত হয়েছেন। তাই বুধবারের চেয়ে বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি অনেক ভাল ছিল।’’
গোটা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) বিভু গোয়েল জানান, প্রথম দিন ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের জন্য প্রতিটি শিবিরে ১০টি করে কাউন্টার খোলা হয়েছিল। অতিরিক্ত ভিড় দেখে বেশ কিছু শিবিরে তার ১৫টি করা হয়েছে। তাতে অনেক সুবিধা হয়েছে বলে দাবি। পাশাপাশি, শিবিরের সংখ্যা ৩০৪ থেকে বাড়িয়ে ৪৮৪টি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।