নামোকেশিয়ায় ক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
এলাকার এক দল আদিবাসী বাসিন্দার বাধায় ফের বাধা পড়ল সালানপুরের নামোকেশিয়ায় ধস কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ শ’পাঁচেক বিক্ষোভকারী প্রকল্প এলাকায় জড়ো হয়ে কাজে বাধা দেন। এলাকা ছেড়ে চলে যান আবাসন নির্মাণে নিযুক্ত কর্মীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় সালানপুর থানার পুলিশ। তবে পুলিশের অনুরোধেও বিক্ষোভ থামেনি। প্রশাসনের অবশ্য আশ্বাস, আলোচনা চলছে, সমস্যা মিটে যাবে।
সালানপুরের উত্তররামপুর-জিতপুর পঞ্চায়েতের নামোকেশিয়ায় প্রায় ২৬ একর খাস জমিতে এই আবাসন প্রকল্প হচ্ছে। সালানপুর, সামডিহি, বনজেমাহারি, ডাবর-সহ আশপাশের ধস কবলিত নানা অঞ্চলের বাসিন্দাদের এই প্রকল্পে বাড়ি দেওয়া হবে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২১৯টি চারতলা আবাসন তৈরি হবে। প্রতিটিতে ১৬টি করে ইউনিট থাকবে। রাজ্য আবাসন দফতর সে জন্য প্রায় ১২৩ কোটি টাকা খরচ করবে। আবাসন তৈরির পাশাপাশি এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, বাজার, কমিউনিটি সেন্টারও তৈরি করা হবে। কাজ শুরু হয়েছে ১০ মার্চ থেকে।
কলকাতার একটি নির্মাণ সংস্থা এই প্রকল্প তৈরির বরাত পেয়েছে। দেড় থেকে দু’বছরের মধ্যে তা শেষ করার কথা। কিন্তু, কাজ শুরু হতেই বারবার বাধা আসছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে তিন বার বাধা পড়ল কাজে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাজ শুরুর দিন তিনেক পরেই আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে আদিবাসীরা এসে বাধা দেন। নির্মাণের যন্ত্রপাতিতে আগুনও ধরানো হয়। এর পরে মাস তিনেক কাজ হয়নি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ফের তা শুরু হয় ২৬ জুলাই। কিন্তু তার দিন দুই পরেই আবার বাধা পেয়ে এলাকা ছাড়েন নির্মাণকর্মীরা।
সমস্যা মেটাতে সেপ্টেম্বরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আসানসোলের মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরী। কিন্তু কাজ শুরু করতে দিতে রাজি হননি বিক্ষোভকারীরা। এই পরিস্থিতিতে শনিবার প্রকল্প এলাকায় মাটি খোঁড়া শুরু হয়। সোমবার ফের বাধা আসে কাজে। এ ভাবে বারবার বাধা আসায় প্রকল্প কী ভাবে হবে, সে নিয়ে সংশয়ে নির্মাণ সংস্থার কর্মীরা।
খাসজমিতে প্রকল্প গড়তে বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন? বিক্ষোভকারীদের দাবি, বহু বছর ধরে তাঁরা এই জমিতে মরসুমি ফসল ফলান। তা বাজারে বিক্রি করে রোজগার করেন। এই জমিতে তাঁরা গবাদি পশুও চরান। গত বছর একশো দিনের কাজে এখানে প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে আমগাছ লাগিয়েছেন। তাঁদের আরও দাবি, এলাকার গৃহহীন আদিবাসীদের এই জমিতে বাড়ি তৈরির পাট্টা দেওয়ার কথা। সেখানে আবাসন তৈরি হলে তাঁরা বিপাকে পড়বেন। সোমবার বিক্ষোভকারীদের তরফে বিপ্লব মারান্ডির বক্তব্য, ‘‘এই জমিতে আবাসন না গড়ার জন্য আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। তবু জোর করে কাজ করা হচ্ছে। তাই আন্দোলনে নেমেছি।’’
মহকুমা প্রশাসনের তরফে অবশ্য জানানো হয়, সমস্যা মেটাতে আলোচনা শুরু হয়েছে। শীঘ্রই মিটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।