খেতে বীজ বুনেই দৌড় স্কুলে

কাকভোরে বাবার সঙ্গে বেরিয়ে পড়তে হয় খেতের কাজে। দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনি। চাষের মরসুমে অনেক সময় স্কুলটাও যাওয়া হয় না। কিন্তু তাতে কী! কোনও বাধায় টিকতে পারেনি ভাতারের ওরগ্রামের সুজিত মাঝির কাছে। এ বারের মাধ্যমিকে ৯২ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০৩:০৩
Share:

সুজিত মাঝি। নিজস্ব চিত্র।

কাকভোরে বাবার সঙ্গে বেরিয়ে পড়তে হয় খেতের কাজে। দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনি। চাষের মরসুমে অনেক সময় স্কুলটাও যাওয়া হয় না। কিন্তু তাতে কী! কোনও বাধায় টিকতে পারেনি ভাতারের ওরগ্রামের সুজিত মাঝির কাছে। এ বারের মাধ্যমিকে ৯২ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে।

Advertisement

ওরগ্রামে তিন ছেলে, স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার অমর মাঝির। অমরবাবু পেশায় খেত মজুর। তিনি জানান, পাঁচ জনের সংসারে বছরভর ভাত জোগাড় করতেই নাভিশ্বাস ওঠে তাঁর। বাড়তি কিছু রোজগারের আশায় বড় ছেলে সুজিতও প্রতিদিন চাষের কাজ করতে যায়। চাষের মরসুমে পড়াশোনা তো দূর অস্ত, খাবার সময়টুকুও মিলত না বলে জানায় সুজিত। কী ভাবে চলে পড়াশোনা? এক চিলতে মাটির বাড়ির বারান্দায় বসেই পরীক্ষার আগের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায় তার। এক দিনের অভিজ্ঞতার কথা জানায়। তখন বীজবোনার মরসুম চলছে। বীজ বুনেই রোজ দৌড়তে হতো। ক্লাসে যেতে হবে যে। ভয় ছিল, কোনও ভাবে ক্লাস কামাই হলে পিছিয়ে পড়তে হবে অন্যদের থেকে, কারণ একটাও গৃহশিক্ষক নেই তার। তবে মাস্টারমশাইরাও এই উজ্জ্বল ছাত্রটিকে নিরাশ করতেন না। স্কুলে আসতে দেরি হলেও ক্লাস শেষে সুজিতকে হাসিমুখেই পড়া দেখিয়ে দিতেন তাঁরা।

ছেলের গর্বে মা চম্পাদেবীর চোখে জল। তাঁর শুধু একটাই কথা, ‘‘এত ভাল রেজাল্ট করল ছেলেটা। কিন্তু কোনও দিন ওকে ভাল ভাবে খেতে বা নতুন পোশাক কিনে দেওয়ার সামর্থ্যটুকুও নেই আমাদের।’’ তবে ছেলেকে পড়াশোনায় উৎসাহ দিতে কোনও খামতি রাখেননি অমরবাবু আর চম্পাদেবী। ওঁদের কথায়, ‘‘ছেলের দিকে মুখ চেয়েই তো বেঁচে আছি। অনেক আশা, ছেলেটা ভাল চাকরি আমাদের সকলের দুঃখ ঘোচাবে।’’ সুজিতের ভাল ফলে উৎসাহের শেষ নেই তার পড়শি অশোক মাঝি, সাগর কর্মকারেদেরও।

Advertisement

সুজিতকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই ওর বন্ধুদেরও। ইন্দ্রজিৎ দাস বৈরাগ্য, বিক্রম বাদ্যকর, দীপ কর্মকারেরা জানায়, ক্লাসে এসে খানিক ক্লান্ত হয়ে পড়ত সুজিত। কিন্তু পরক্ষণেই বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকত সে। সেই পরিশ্রমেই সুজিত এ বারের মাধ্যমিকে ৬৪৫ পেয়েছে। রিনা ঘোষ, মৃণাল জানা, গৌতম বণিকদের মতো স্কুলের শিক্ষকের আশা করেছিলেন সুজিত ভাল ফল করবে। সুজিত জানায়, ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবে সে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রিয়ব্রত সরকার বলেন, ‘‘সুজিতের কোনও বেতন লাগবে না। বই, খাতা যা লাগবে, সব আমরা কিনে দেব।’’

পড়াশোনার বাইরে দিনের একটা সময় রেডিওতে একটু রবীন্দ্রনাথের গান না শুনলে চলে না সুজিতের। প্রিয় গান? ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে..’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন