সংস্কারের পরেও বাঁকা সেই ‘নালা’

তার মধ্যেই আর্বজনা না ফেলার অনুরোধে লাগানো বোর্ডে বাঁকাকে ‘নালা’ লেখায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে। প্রতিবাদে চিঠিও পাঠানোর কথা জানিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ০১:১৮
Share:

এই লেখা নিয়েই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

সংস্কার শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাসখানেক কাটতে না কাটতেই বাঁকা সেই আবর্জনাময়। শহরবাসীর দাবি, পাশ দিয়ে যাওয়া তো দূর, জানালাও খোলা রাখা যাচ্ছে না দুর্গন্ধে। প্রশ্ন উঠেছে, বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার সংস্কার পদ্ধতি নিয়েও।

Advertisement

তার মধ্যেই আর্বজনা না ফেলার অনুরোধে লাগানো বোর্ডে বাঁকাকে ‘নালা’ লেখায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে। প্রতিবাদে চিঠিও পাঠানোর কথা জানিয়েছেন তাঁরা।

বেশ কয়েক মাস ধরে বাঁকার পলি মাটি তুলে ফেলার কাজ চলছে। দুই পাড় বোল্ডার দিয়ে বাঁধানোর কাজও হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে বীরহাটা সেতু থেকে কাঠের সেতু পর্যন্ত বাঁকা সংস্কার হয়েছে। কিন্তু ঘটনা হল, সংস্কারের মাস খানেক পার হতে না হতেই বাঁকা ফিরেছে চেনা চেহারায়। দু’পাড়ের বাসিন্দাদের বক্তব্য, “একটু হাওয়া দিলেই এত দুর্গন্ধ বের হচ্ছে, যে জানালা খুলে রাখা যাচ্ছে না। গরমেও জানালা বন্ধ করে থাকতে হচ্ছে।” অথচ কয়েক দশকের দাবি মেনে শীতকালে বাঁকা সংস্কার শুরুর পরে আশার আলো দেখেছিলেন বর্ধমানের বাসিন্দার। এখন অবশ্য তাঁদের কথায়, ‘‘সকাল দেখে যেমন বোঝা যায়, দিন কেমন যাবে। তেমনি বাঁকার হাল দেখে মনে হচ্ছে টাকাগুলো নোংরা জলেই মিশে গেল।” বাঁকা ঘুরে দেখা যায়, জলে বিভিন্ন পশুর মৃতদেহ ভেসে বেড়াচ্ছে। নদীর মাঝখানে পলি জমে জল স্থির হয়ে রয়েছে।

Advertisement

বেহাল: পানা, আবর্জনা জমে বেহাল বাঁকা, বীরহাটার কাছে। নিজস্ব চিত্র

নদী বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, এমনটা হওয়ারই কথা ছিল। ভুল পদ্ধতিতে সংস্কার হয়েছে বলেো তাঁদের দাবি। তাঁরা জানান, গলসি থেকে পূর্বস্থলীর সমুদ্রগড় পর্যন্ত ১২৫ কিলামিটার বাঁকার দৈর্ঘ্য। কাঞ্চননগর থেকে কালনাগেটের কাছে রেলসেতু পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার বাঁকার বিস্তৃতি। কিন্তু শহরের ভিতর বাঁকার মাঝের অংশে সংস্কার হয়েছে। ফলে জল নীচে নামতে পারছে না। তার উপর উপরের নর্দমার জল নীচে এসে মিশেছে। ফলে কোনও লাভ হয়নি।

তার মধ্যেই সেচ দফতর ‘বাঁকা নালায়’ ময়লা-আবর্জনা ফেলতে নিষেধ করে বোর্ড টাঙিয়েছে। রেলও বাঁকাকে ‘নালা’ বলেছে। তৈরি হয়েছে বিতর্ক। গবেষক নীরদবরণ সরকারের কথায়, “১৯১০ সালে বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারের ৮ নম্বর পাতায় বাঁকাকে নদী বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তারপরেও নদীকে নালা বলে শহরের আবেগে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে।” বর্ধমান শহর হেরিটেজ কমিটির কর্তা সর্বজিৎ যশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউরেটর রঙ্গনকান্তি জানা বলেন, “এর প্রতিবাদ করে চিঠি পাঠানো হবে।” ওই দুটি সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন, ভুল হয়ে থাকলে সংশোধন করে নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন