ফের বেসামাল গাড়ির ধাক্কায় মৃত ৪

ফের মদ্যপ চালকের জন্য দুর্ঘটনায় প্রাণহানির অভিযোগ উঠল এ রাজ্যে।একটি মোটরবাইকে ধাক্কা মেরে পালাতে গিয়ে ‘তীব্র গতি’তে ছুটছিল সাদা রঙের সিড্যান গাড়ি। কিন্তু পালাতে গিয়েই ফের দুর্ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মন্তেশ্বর ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৭ ০২:০৯
Share:

ঘাতক: দুর্ঘটনার পরে সেই গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

ফের মদ্যপ চালকের জন্য দুর্ঘটনায় প্রাণহানির অভিযোগ উঠল এ রাজ্যে।

Advertisement

একটি মোটরবাইকে ধাক্কা মেরে পালাতে গিয়ে ‘তীব্র গতি’তে ছুটছিল সাদা রঙের সিড্যান গাড়ি। কিন্তু পালাতে গিয়েই ফের দুর্ঘটনা। বেসামাল ওই গাড়ির ধাক্কায় শুক্রবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরে প্রাণ গেল ভিন্-রাজ্যের চার খেতমজুরের। জখম পাঁচ জন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন মন্তেশ্বরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক চৌধুরী মহম্মদ হেদায়েতুল্লার ছেলে হামিদুল্লা চৌধুরী। দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। গাড়িতে থাকা তাঁর এক সঙ্গী
শেখ মহম্মদ শহিদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তা আমরা জেরা করে জানব। চালক মদ্যপ ছিলেন কি না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। আপাতত অভিযুক্তের খোঁজ চালানো হচ্ছে।’’ তবে পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় তাদের কাছে শহিদ জানিয়েছেন, নবদ্বীপ থেকে ফেরার পথে এক পরিচিতের বাড়িতে গিয়ে মদ্যপান করেন তিনি, হামিদুল্লা ও তাঁদের এক সঙ্গী। ফেরার পথে হামিদুল্লাই গাড়ি চালাচ্ছিলেন।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম বাজারে রাস্তার পাশে দাঁড় করানো একটি মোটরবাইকে ধাক্কা মারে গাড়িটি। শহিদের দাবি, ‘‘কয়েক জন মোটরবাইকে চড়ে আমাদের ধাওয়া করলে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয় হামিদুল্লা।’’ কত গতিতে চলছিল গাড়ি? মন্তেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক সৈকত পাঁজা বলেন, ‘‘শুনেছি, হামিদুল্লা অন্তত ১১০-১২০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালাচ্ছিল।’’

মন্তেশ্বর-মালডাঙা রাস্তায় জয়রামপুর সেতু থেকে একশো মিটার দূরে রাস্তার পাশেই এলাকার বাসিন্দা হারান শেখের জমি। সেখানে ধান ঝাড়ার কাজ সেরে একটি ট্রাক্টরে চেপে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলার পটনাডি গ্রামে ফেরার তোড়জোড় করছিলেন এক দল খেতমজুর। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হামিদুল্লাদের গাড়ি গিয়ে ট্রাক্টরটিকে ধাক্কা মারে। ট্রাক্টর নয়ানজুলিতে পড়ে যায়। উল্টে যায় গাড়িটিও।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গাড়ি থেকে নেমে হাত দেখিয়ে মন্তেশ্বর সদরমুখী এক মোটরবাইক চালককে দাঁড় করান হামিদুল্লা। দ্রুত এলাকা ছাড়েন ওই মোটরবাইকে চেপে। গাড়ির আর এক আরোহীও পালান।

স্থানীয় বাসিন্দারা আহত খেতমজুরদের উদ্ধার করে মন্তেশ্বর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে মৃত্যু হয় জোয়ানি মুর্মু (১৮) ও সোহিনী কলিনের (৩০)। জখম এক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ছ’জনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সরানো হয়। সেখানে মৃত্যু হয় ফতে হাঁসদা (৩৭) ও রাজেশ রাইয়ের (৩৫)। অন্য আহতেরা শনিবারও কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না।

দুর্ঘটনাস্থলে এ দিন গিয়ে দেখা গিয়েছে, অল্প দূরত্বে অন্তত তিন জায়গায় রক্তের ছোপ। গাড়িটির বনেট তুবড়ে গিয়েছে।

প্রাক্তন বিধায়ক মহম্মদ হেদায়েতুল্লার দাবি, শুক্রবার রাত থেকে তিনি হামিদুল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
তাঁর কথায়, ‘‘ঘটনা শুনে অন্তত একশো-দু’শো বার ছেলেকে ফোন করেছি। ও গাড়ি চালাচ্ছিল কি না, জানি না। তবে আমাদের নিজস্ব চালক আছে। সাধারণত সে-ই গাড়িটা চালায়।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘হামিদুল্লা মদ্যপান করে বলেও কখনও শুনিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন