চাষের ক্ষতিপূরণে অনিয়ম, দেওয়ালে সরব সিপিএম

গত বছর মার্চ, এপ্রিল মাসে শিলাবৃষ্টির জেরে জেলার বোরো চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়। চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হয় জুলাই, অগস্ট মাস থেকে। তারপর থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বড় অংশ অভিযোগ করতে থাকেন, চেক বিলির ক্ষেত্রে শাসকদল পক্ষপাতিত্ব করছে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:০২
Share:

এমন ব্যঙ্গচিত্রেই চলছে ভোট-প্রচার। নিজস্ব চিত্র।

সোশ্যাল মিডিয়া হোক বা পাড়ার দেওয়াল— নারদ হুলে শাসকদলকে বিদ্ধ করতে কোনও কসুর করছে না বিরোধী দলগুলি। বর্ধমান জেলায় প্রচারের উপরি অস্ত্র হিসেবে শিলাবৃষ্টির পর ক্ষতিপূরণের বিষয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগকেও সামনে নিয়ে আসছে বিরোধীরা।

Advertisement

গত বছর মার্চ, এপ্রিল মাসে শিলাবৃষ্টির জেরে জেলার বোরো চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়। চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হয় জুলাই, অগস্ট মাস থেকে। তারপর থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বড় অংশ অভিযোগ করতে থাকেন, চেক বিলির ক্ষেত্রে শাসকদল পক্ষপাতিত্ব করছে। স্থানীয় নবস্থা, বেগুট, আউশা, সাঁড়িগ্রাম, চাকুন্দি, হলদেগ্রাম, পলসাম বড়শুয়া, গাঙ্গুয়া প্রভৃতি গ্রামের চাষিরা অভিযোগ করতে থাকেন, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা চেক পাচ্ছেন না। অথচ শাসকদলের ঘনিষ্ঠ লোকজন ক্ষতিপূরণের চেক পাচ্ছেন।

চেক বিলিতে অনিয়মের এই অভিযোগকে সামনে রেখে এ বার প্রচারে নেমেছেন জোটের নেতা-কর্মীরাও। চলছে দেওয়াল লিখন ও ছড়া কাটা। যেমন, মেমারির বেগুট গ্রাম। দেওয়াল জুড়ে ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছে সিপিএম। সেখানে নারদ কাণ্ড ও ক্ষতিগ্রস্তদের চেক না পাওয়ার ঘটনাকে একই ফ্রেমে এনেছেন বাম কর্মীরা। পাশেই রয়েছে ছড়া, ‘‘সব লুটে নিলি বাবা, আমি যে একজন গরিব চাষি।’’ কোথাও বা আবার শিলাবৃষ্টিতে ধান চাষে ক্ষতির ছবিও রয়েছে।

Advertisement

ক্ষতিপূরণে অনিয়মের অভিযোগে গত বছর ২০ অগস্ট এই গ্রামেই বাসিন্দাদের একাংশ স্থানীয় তৃণমূল নেতা অরবিন্দ হুঁইকে বেঁধে রাখেন। পুলিশকেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। মেমারি থানায় সাত জন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। সিপিএমের কৃষক সভার নেতা তথা বেগুট গ্রামের বাসিন্দা কল্যাণ হাজরা বলেন, “তথ্য জানার আইনে আবেদন করে ২২৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত চাষির তালিকা পেয়েছিলাম। দেখা যায় শুধুমাত্র বেগুট গ্রামে ২৯ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।” গ্রামবাসীরা জানান, তালিকায় দেখা যায়, জমি নেই এমন বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতাও চেক পেয়েছেন। স্থানীয় চাষি ধীরেন বাস্কে, বাঁকু সাঁতরাদের অভিযোগ, “শাসক দলের লোকেরা ক্ষতিপূরণের ফর্ম পর্যন্ত দেয়নি।’’ তবে আন্দোলনের জেরে শেষমেশ কৃষি দফতর ওই এলাকায় নতুন করে ১৩০ জন চাষিকে ক্ষতিপূরণ দেয়। কালনার কাঁকুরিয়া গ্রামেও চাষিদের ভুয়ো চেক দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। শুক্রবার বাড়ির দাওয়ায় বসে অরবিন্দবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘তদন্ত হলে সত্য জানা যেত।’’

পুরো বিষয়টি নিয়ে সিপিএমের বর্ধমান সদর ৩ লোকাল কমিটির সম্পাদক উত্তম কোনার বলেন, “পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি করা হয়েছে। তৃণমূল চাষিদের ক্ষতিপূরণ নিয়েও আমরা-ওরা করেছে।” বর্ধমান উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী নিশীথ মালিকের পাল্টা দাবি, “সিপিএমের আমলে তো চাষিদের ক্ষতিপূরণই দেওয়া হত না। তৃণমূলের সরকার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছে।”

দাবি, পাল্টা দাবির মাঝেই হাটগোবিন্দপুরে চায়ের দোকানের আড্ডা দিচ্ছিলেন এক বছর ত্রিশের যুবক। পাশেই বসে থাকা এক বন্ধুকে তিনি কিন্তু বলে ফেলেন, ‘‘সব মিলিয়ে ক্ষতিপূরণে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগকে কেন্দ্র করে প্রচারে সবদলের মেজাজটাই ‘নারদ নারদ’ হয়ে গেল যেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন