পরপর দুষ্কর্ম, প্রশ্ন পুলিশের ভূমিকায়

কখনও সংঘর্ষের খবর পেয়ে দেরিতে পৌঁছনো। কখনও আবার আগে থেকে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেআইনি খাদান নিয়ে এলাকায় অশান্তি। কাঁকসায় অপরাধমূলক কাজকর্ম বাড়ার পিছনে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার দিকে বারবার আঙুল তুলছেন বাসিন্দাদের একাংশ।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০২:৪৫
Share:

২ নম্বর জাতীয় সড়ক বা পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কে লরি বা ট্রাক আটকে পুলিশকে প্রায়ই এ ভাবে টাকা নিতে দেখা যায় বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। পানাগড়ে দার্জিলিং মোড়ে বিকাশ মশানের তোলা ছবি।

কখনও সংঘর্ষের খবর পেয়ে দেরিতে পৌঁছনো। কখনও আবার আগে থেকে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেআইনি খাদান নিয়ে এলাকায় অশান্তি। কাঁকসায় অপরাধমূলক কাজকর্ম বাড়ার পিছনে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার দিকে বারবার আঙুল তুলছেন বাসিন্দাদের একাংশ। শুধু তাই নয়, বিরোধীদের অভিযোগ, দুষ্কর্ম রোখার বদলে পুলিশ ব্যস্ত থাকে লরি থামিয়ে টাকা আদায়ে। তার জেরে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ও পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কে যানজট বাড়ছে বলে সিপিএমের অভিযোগ।

Advertisement

মে মাসের মাঝামাঝি দুর্গাপুরের বিধাননগরের কলিন্স পথ এলাকার বাসিন্দা অভিজিৎ পালচৌধুরী নিখোঁজ হন। তিন দিন পরে তাঁর পচাগলা দেহ উদ্ধার হয় কাঁকসা থানা এলাকার বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানার পরিত্যক্ত ম্যানহোল থেকে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পেটে ও বুকে গুলি করে তাঁকে খুন করা হয়। মাথায় আঘাতের চিহ্নও মিলেছিল। এই ঘটনায় পুলিশ গোপালপুর থেকে লোহার কারবারি সুকান্ত দত্ত ও বীরভূমের দুবরাজপুরের তিন জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় জানায়, নিহত যুবক লোহার কারবারিদের মধ্যে খবর আদান-প্রদান করতেন। এলাকায় অবৈধ লোহার কারবারের বাড়বাড়ন্ত যে শুরু হয়েছে এই ঘটনাই তার প্রমাণ বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তার কিছু দিন আগে ওই কারখানা থেকেই লোহার যন্ত্রাংশ চুরি করতে গিয়ে বোমা ফেটে জখম হয় তিন দুষ্কৃতী। বেআইনি কারবার বন্ধে আগে থেকে পুলিশ সক্রিয় হলে এমন খুনের ঘটনা ঘটত না বলে মনে করেন বাসিন্দাদের একাংশ।

সপ্তাহখানেক আগে গ্রামে এক অনুষ্ঠানে কী রঙের আবির ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে রঘুনাথপুরে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হয়। ধাক্কাধাক্কিতে এক প্রবীণ বাসিন্দা পড়ে যান। তাঁর মৃত্যু হয়। সংঘর্ষে জখম হন তিন জন। পুলিশ পরে চার জনকে গ্রেফতার করে। তবে গ্রামবাসীর অভিযোগ, পুলিশ সময়ে হাজির না হওয়ার জন্যই সংঘর্ষ বড় আকার নেয়। এই ঘটনার এক দিন পরেই বনকাটি গ্রামে অজয়ে অবৈধ খাদানের দখল নিয়ে দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে বিবাদ বাধে। সেক্ষেত্রেও অভিযোগ, পুলিশের তরফে খাদানটি বন্ধ করার কোনও উদ্যোগ নজরে পড়েনি। বুধবার রাতে পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কে হাসপাতাল মোড়ের কাছে রাস্তা আটকে এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। এটিএম থেকে টাকা তুলে ওই বাসিন্দা কাঁকসার ৩ নম্বর কলোনিতে বাড়ি ফিরছিলেন। মোটরবাইকে চড়ে আসা দুষ্কৃতীরা তাঁকে মাঠের পাশে টেনে নিয়ে গিয়ে মারধর করে টাকা কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

একের পর এক এমন ঘটনায় এলাকার বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন। তাঁদের অভিযোগ, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কে পুলিশকে মালবাহী লরি ও ট্রাক আটকাতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন বাসিন্দার কথায়, ‘‘জানলা দিয়ে চালক হাত বাড়িয়ে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে কিছু একটা না দেওয়া পর্যন্ত লরি বা ট্রাক আটকে থাকে।’’ সিপিএমের প্রাক্তন জোনাল সম্পাদক বীরেশ্বর মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘রাস্তায় লরি, ট্রাক আটকে তোলা আদায় করা রেওয়াজে পরিণত করে ফেলেছে পুলিশ। কাজের কাজ না করে এখন এ সব নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে তারা। ফলে, দিন-দিন অপরাধমূলক কাজকর্ম বাড়ছে।’’

পুলিশ অবশ্য এমন কোনও অভিযোগ মানতে চায়নি। কাঁকসা থানার তরফে জানানো হয়, অপরাধমূলক যে কোনও কাজকর্মের বিরুদ্ধেই উপযুক্ত তদন্ত হয়। অভিযুক্তেরা নিয়মিত ধরাও পড়ছে। বর্ধমান জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, জাতীয় ও রাজ্য সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে লরি-ট্রাক আটকে টাকা তোলার কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস ওই আধিকারিকের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন