পুকুর ভরাট করে চাষ, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা

পুকুরে ও তার পাড়ে মাটি ফেলে চাষ করার অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। মন্তেশ্বরের জামনা পঞ্চায়েতের আসুরি মৌজায় ওই পুকুরের আশপাশের বাসিন্দাদের থেকে খবর পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মন্তেশর শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০২:১০
Share:

এই পুকুর নিয়েই উঠেছে অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।

পুকুরে ও তার পাড়ে মাটি ফেলে চাষ করার অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। মন্তেশ্বরের জামনা পঞ্চায়েতের আসুরি মৌজায় ওই পুকুরের আশপাশের বাসিন্দাদের থেকে খবর পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। এই দফতরের আধিকারিক ওই তিন জনের বিরুদ্ধে মন্তেশ্বর থানায় অভিযোগও করেছেন।

Advertisement

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আসুরি গ্রামে ঢোকার মুখে রয়েছে এই পুকুরটি। সরকারি খাস তালিকায় নথিভুক্ত এই পুকুরের জলে আশপাশের জমিতে সেচের কাজ হত। বিস্তীর্ণ পাড়ে গরু-ছাগল চরে বেড়াত। বাসিন্দাদের দাবি, কয়েক বছর আগে পুকুর পাড়ে বেশ কিছু গাছ ছিল। অভিযোগ, গত জুনে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি অসিত দাঁ এবং তাঁর দুই ভাই হেমন্ত দাঁ ও দেবাশিস দাঁ যন্ত্র এনে মাটি ফেলে পুকুর ভরাট করেন। খাস পুকুর এবং তার পাড়ের জমি ভরাটের প্রতিবাদে এলাকার ২২ জন মৎস্য দফতর, বিএলএলআর দফতর-সহ নানা জায়গায় স্মারকলিপি জমা দেন। সুকুমার ভট্টাচার্য, নিতাই দাস, সুশান্ত মণ্ডল, কেনারাম দাস, পলাশ ঘোষেরা দাবি করেন, পুকুরটি আগের অবস্থায় ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক। প্রতিবাদে সরব হন এলাকার এক তৃণমূল নেতা বিনয় ঘোষও। তিনিও নানা দফতরে চিঠি পাঠান। ২৬ জুলাই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর অভিযোগকারীদের চিঠি দিয়ে জানায়, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এর পরেই তদন্তে নামেন মন্তেশরের বিএলএলআরও রথীন মজুমদার। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগের সত্যতা মেলায় দিন কয়েক আগে রথীনবাবু মন্তেশর থানায় তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। রবিবার রথীনবাবু বলেন, ‘‘সরকারি রেকর্ডে ওই জায়গা পুকুর এবং তার পাড় হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। তদন্তে নেমে গরমিল ধরা পড়ায় নিয়মমাফিক থানায় অভিযোগ করেছি।’’ মন্তেশর থানা জানায়, এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

Advertisement

খাস পুকুর এবং তার পাড়কে চাষযোগ্য জমিতে পরিণত করার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে জামনা অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি অসিতবাবু রবিবার দাবি করেন, ‘‘যে জমিটি নিয়ে কথা হচ্ছে সেখানে আমরা কেবল বোরো চাষ করি। অন্য সময় সেখানে চাষ করে এলাকার সাতটি আদিবাসী পরিবার। বিনয়ের সঙ্গে সকালে কথা বলে নিয়েছি। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটে যাবে।’’ অসিতবাবুর আরও দাবি, সরকারি রেকর্ডে ওই জায়গায় পুকুর থাকলেও মজে গিয়ে তার কোনও অস্তিত্ব ছিল না। এলাকায় এই রকম আরও ৭-৮টি জায়গায় চাষাবাদ হচ্ছে বলে দাবি তাঁর। সেগুলিও কি খাস জমি বুজিয়ে? নেতার উত্তর, ‘‘কিছু খাস।’’ যদিও বিএলএলআর দফতরের দাবি, ওই এলাকায় এই রকম আর কোনও ঘটনা জানা নেই। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।

তৃণমূল নেতা বিনয়বাবুর বক্তব্য, ‘‘ওঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে আমার কোনও কথা হয়নি। এলাকার মানুষ ঘটনাটির প্রতিবাদ করে আমায় জানিয়েছিলেন। আমি তাই সরকারি দফতরে জানিয়েছিলাম। আইন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা হওয়ার হবে।’’ মন্তেশর ব্লক তৃণমূল সভাপতি সজল পাঁজা বলেন, ‘‘ঘটনাটি আমার কানে এসেছে। এ নিয়ে দল শীঘ্রই তদন্তে নামবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন