আসানসোলে বৈঠকে। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
শিল্প সংক্রান্ত নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে দক্ষিণবঙ্গের ছ’টি জেলার শিল্পপতি ও বণিকসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত আঞ্চলিক কোর কমিটির প্রথম বৈঠক হল আসানসোলে। শনিবার সেই বৈঠকে ছিলেন কমিটির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী অমিত মিত্র। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকেরা ও বিভিন্ন সরকারি দফতরের আধিকারিকেরা ছিলেন। ঘণ্টা তিনেকের এই বৈঠকে শিল্প সংক্রান্ত নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।
শিল্পস্থাপনে কতটা শিল্পবান্ধব পরিবেশ ও পরিকাঠামো দেওয়ার আশ্বাস মন্ত্রী দিতে পারেন, মূলত সে দিকেই তাকিয়েছিলেন শিল্পপতিরা। বৈঠক শেষে মন্ত্রী অমিতবাবু জানান, কমবেশি ৭০টি বিষয় নিয়ে শিল্পপতিরা আলোচনা করেছেন। তার বেশির ভাগই ছিল শিল্প গড়া নিয়ে। অমিতবাবুর দাবি, প্রতিটি বিষয়েরই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। কয়েকটি সমস্যা সমাধানও করে দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘আমি জেলাশাসকদের পরামর্শ দিয়েছি, এ দিন যে সমস্যাগুলির হাল হয়নি, সেগুলি তাঁরাই সমাধানেরর দায়িত্ব নেবেন।’’
সরকারের তরফে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও নতুন শিল্প গড়তে গিয়ে নানাবিধ সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে বলে বণিকসভার সদস্যদের অভিযোগ। এ দিন মন্ত্রী সে কথা শোনার পরে জানান, শিল্পের জন্য জমির মিউটেশন হবে আবেদনের ২১ দিনের মধ্যে। ৩০ দিনের মধ্যে জমির চরিত্র বদল করা যাবে। দূষণ সংক্রান্ত ছাড়পত্র মিলবে ৬০ দিনের মধ্যে। মাটির তলার বা নদীর জল ব্যবহারের অনুমতি মিলবে ২১ দিনের মধ্যে। বিদ্যুতের সংযোগ মিলবে ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে। এর কোনওটি যদি নির্দিষ্ট সময়ে শিল্পপতিরা না পান তবে জেলাশাসকের কাছে জানালে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাঁর আশ্বাস। নতুন কোনও বিনিয়োগ এই ছয় জেলায় আসছে কি না, সরাসরি সে প্রশ্নের উত্তর না দিলেও মন্ত্রী অমিতবাবু বলেন, ‘‘শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখানে চার একর জায়গায় নতুন হাসপাতাল তৈরি হবে। ইতিপূর্বে একটি সংস্থা সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বসে আছে।’’ তাঁর আশ্বাস, শিল্পপতিদের দাবি মতো পানাগড় শিল্পতালুকের কাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে।
গত ২৯ জানুয়ারি আসানসোল বণিকসভা আয়োজিত শিল্প-বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করতে আসানসোলে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিন দক্ষিণবঙ্গের শিল্পপতিদের সঙ্গে একটি চা চক্রে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, দক্ষিণবঙ্গের ছ’টি জেলায় শিল্পে উন্নতির জন্য একটি আঞ্চলিক কোর কমিটির গঠন করা হবে। এলাকার শিল্পপতিদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করবে এই কমিটি। সেই মতো ২১ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় বিশেষ বৈঠকে কোর কমিটি তৈরি হয়। শনিবার কমিটির প্রথম সভা হল।
এ দিন বৈঠক শেষে ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কার্যকরী সম্পাদক রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান বলেন, ‘‘শিল্পমন্ত্রীর কথায় আমরা আশাবাদী। বিনা বাধায় শিল্পস্থাপন হলে এলাকার আর্থিক উন্নতি হবে।’’ আসানসোল বণিকসভার সভাপতি সুব্রত দত্ত বলেন, ‘‘কোর কমিটির প্রথম বৈঠকে একাধিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। কার্যকর হলে সব পক্ষ লাভবান হবেন।’’ বাঁকুড়া বণিকসভার সভাপতি মধুসুদন দরিপা বলেন, ‘‘মন্ত্রী অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। কতটা লাভ হল, ভবিষ্যৎ বলবে।’’