চার ছেলে খোঁজ নেয় না, প্রশাসনের দ্বারস্থ বৃদ্ধ

শীর্ণ শরীর, হাঁটা-চলা করলেই হাঁপানিতে দমবন্ধ হয়ে আসে। গত দু’বছর ধরে অন্ধকার ঘরে এ ভাবেই দিন কাটাচ্ছেন কালনার বাসিন্দা হরপ্রসাদ দাস (৭৪)। অভিযোগ, চার ছেলে খোঁজ নেন না তাঁর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৭ ০৩:২০
Share:

ভরসা: হরপ্রসাদবাবুর সঙ্গে কথা বলছেন মহকুমাশাসক। নিজস্ব চিত্র

শীর্ণ শরীর, হাঁটা-চলা করলেই হাঁপানিতে দমবন্ধ হয়ে আসে। গত দু’বছর ধরে অন্ধকার ঘরে এ ভাবেই দিন কাটাচ্ছেন কালনার বাসিন্দা হরপ্রসাদ দাস (৭৪)। অভিযোগ, চার ছেলে খোঁজ নেন না তাঁর। তাই শেষমেশ সব কথা জানিয়ে মঙ্গলবার মহকুমাশাসককে চিঠি পাঠিয়েছিলেন বৃদ্ধ। অভিযোগ পেয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসকও।

Advertisement

মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের কিলোমিটার খানেক দূরে বড়মিত্র পাড়ায় টোটো চালক ভাইপোর বাড়িতে গত দুবছর ধরে ঠাঁই হরপ্রসাদ বাবুর। মঙ্গলবার সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া। বৃদ্ধ তাঁকে জানান, তাঁর বাড়ি কাঠিগঙ্গা এলাকায়। ছিলেন মুদির দোকানি। বছর দশেক আগে ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় বাড়ি বিক্রি করেন। ছেলেদের মধ্যে ভাগ করে দিতে সে টাকা তুলে দেন বড় ছেলে প্রদীপ দাসের হাতে। চার ছেলের কাছেই থাকছিলেন বৃদ্ধ ও তাঁর স্ত্রী। বছর চারেক আগে ক্যানসারে স্ত্রীর মৃত্যুর পরেও কিছুদিন ছেলেদের কাছেই ছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, এর পরেই বার করে দেন ছেলেরা। তখন সোনাপট্টিতে একটি দোকানের সামনে দিন কাটছিল হরপ্রসাদবাবুর। ভাইপো নিতাই দাস জানান, সব দেখে কাকাকে নিয়ে যান তিনি।

এ দিন বৃদ্ধ জানান, গত দু’বছরে ছেলেরা খোঁজ নেননি। সপ্তাহখানেক আগে অসুস্থ হয়ে তিনি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর টিবি ধরা পরে। টোটোচালক নিতাইবাবু বলেন, ‘‘সংসারে এমনিই পাঁচ জন। তার উপরে হাজার টাকা মাসিক ভাড়া দিয়ে একটি ঘরে কাকাকে রেখেছি।’’ কাকার খরচ জোগাতে হিমসিম খাচ্ছেন তাঁরা। নিতাইবাবুর স্ত্রী সোমাদেবী জানান, হাসপাতাল থেকে আসার পরে কাকাকে টোটতে করে কালনায় ওঁর এক ছেলের কাছে পাঠাই। ওঁরা ফেরত পাঠিয়ে দেন। আমাদের বাড়ির কাছে একটি মাঠে রেখে যান। স্থানীয় বাসিন্দা ঝুমা লাহিড়ী জানান, কষ্টে দিন কাটছে হরপ্রসাদবাবুর। মঙ্গলবার মহকুমা শাসকের কাছে ওঁর চিঠি পৌঁছে দিই। এ দিন মহকুমা শাসকের হাত আঁকড়ে বৃদ্ধের আর্তি, ‘‘বাকি জীবনটা শান্তিতে বাঁচতে চাই।’’

Advertisement

মহকুমাশাসক জানান, সুয়োমোটো মামলা দায়ের করা হচ্ছে। উনি যাতে ভরনপোষণ বাবদ অর্থ পান, তাই এক ম্যজিস্ট্রেটকে দিয়ে ছেলেদের সম্পত্তি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ১১ মে চূড়ান্ত হবে ছেলেরা ওঁকে কতটা অর্থ দেবেন। আরও কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় কি না, তা-ও দেখা হবে বলে জানান মহকুমাশাসক। বৃদ্ধের এক ছেলে অজিত দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা তিনি জানান, বাবাকে নিয়ে অনেক কথা বলার আছে। প্রশাসনের মামলা প্রসঙ্গে জানান, তাতে কিছু এসে যায় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন