বিলের অঙ্ক বাড়াতে ‘কারচুপি’, শো-কজ পিজি নার্সিংহোমকে

বিয়াল্লিশ হাজার টাকার বিলে আইসিসিইউ (ইন্টেন্সিভ করোনারি/কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট) -এর চার দিনের ভাড়া ১৪ হাজার টাকা। রোগী আইসিসিইউ-তে থাকলেও আলাদা করে তিন দিনের অক্সিজেন আর চার দিনের মনিটরের ভাড়া আবার ছ’হাজার টাকা।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১০
Share:

বর্ধমানের সেই অভিযুক্ত নার্সিংহোম।—নিজস্ব চিত্র

বিয়াল্লিশ হাজার টাকার বিলে আইসিসিইউ (ইন্টেন্সিভ করোনারি/কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট) -এর চার দিনের ভাড়া ১৪ হাজার টাকা। রোগী আইসিসিইউ-তে থাকলেও আলাদা করে তিন দিনের অক্সিজেন আর চার দিনের মনিটরের ভাড়া আবার ছ’হাজার টাকা। অথচ, স্বাস্থ্য-কর্তারা জানাচ্ছেন, আইন অনুযায়ী, আইসিসিইউ-তে ভর্তি রোগীর মনিটর বা অক্সিজেনের জন্য আলাদা বিল করা যায় না।

Advertisement

ঝাড়খণ্ডের চুমকি লেটের জন্য বানানো বিলে এমনই ‘কারচুপি’ ধরা পড়েছে অভিযোগে সোমবার বর্ধমানের নবাবহাটের পিজি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে শো-কজ করেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জেলায় জিটি রোডের দু’পাশে গজিয়ে ওঠা একাধিক নার্সিংহোমেও আইন ভাঙা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আজ, মঙ্গলবার প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে জেলার সব নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেকে সতর্ক করা হবে।

বর্ধমানেরই রিলিফ নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে আবার রোগীর পরিবারের কাছ থেকে ‘অতিরিক্ত’ টাকা চাওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছে বর্ধমান থানায়। অভিযোগকারী রামপুরহাটের চুন্ডা মাড্ডি। তাঁর দাবি, তাঁর ছেলে জোসেফের চিকিৎসার জন্য তিন লক্ষ টাকা বিল হয়েছে ওই নার্সিংহোমে। মাড্ডি পরিবার ৮৪ হাজার টাকা দিতে পেরেছে। বাকি টাকা না দিলে তাদের জেলে পোরার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বর্ধমান জেলার আদিবাসী কমিটি সিএমওএইচের কাছে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছে। ওই নার্সিংহোমকেও শো-কজ করা হচ্ছে বলে জানান প্রণববাবু। পিজি বা রিলিফ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অভিযোগ মানতে নারাজ।

Advertisement

স্বাস্থ্য-কর্তারা জানাচ্ছেন, বিধি অনুযায়ী, আইসিসিইউ-তে প্রতিটি শয্যার জন্য অন্তত ১২০ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। দু’টি শয্যা পিছু এক জন করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থাকা বাধ্যতামূলক। চারটি শয্যা পিছু এক জন নার্স ও সব সময়ের চিকিৎসকেরও থাকার কথা। অথচ, সোমবার দুপুরে শহরের বেশ কয়েকটি নার্সিংহোমের আইসিসিইউ-তে ঢুঁ মেরে দেখা গেল, অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে বেশি শয্যা রয়েছে অনেক জায়গাতেই। যেখানে ছ’টি শয্যা থাকার কথা, সেখানে রয়েছে আট-ন’টি শয্যা। নার্সের বদলে রয়েছেন আয়া। ২৪ ঘণ্টার চিকিৎসক নেই। এমনকী, কিছু ক্ষেত্রে সব শয্যার পাশে মনিটর বা অক্সিজেন সিলিন্ডারও নেই। বিলের অঙ্ক বাড়াতে এমন নিয়ম ভাঙার শাস্তি নেই?

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, বিধি ভাঙা নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে পাকাপাকি বন্ধ করা যায় না। সিএমওএইচ বলেন, ‘‘আইসিসিইউ-এর পরিকাঠামোগত সমস্যা দেখা গেলে নার্সিংহোমগুলিকে শো-কজ থেকে শুরু করে বন্ধ পর্যন্ত করে দেওয়া হয়। ওরা ফের আবেদন করার পরে পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, নিয়ম মেনে সব কিছু চলছে। তখন লাইসেন্স ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হই।’’

বর্ধমানের ‘নার্সিংহোম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন ঘোষও বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের পরিদর্শনের সময় কিছু নার্সিংহোমকে কনে সাজানোর মতো করে সাজিয়ে তোলা হয়। ফলে, সে সময় তারা পরীক্ষায় পাশ করে যায়। আইন ভাঙার এই মানসিকতাটাই বদলানো দরকার।” বিধি ভাঙার অভিযোগে গত ডিসেম্বরেই ১২টি নার্সিংহোম বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসন। তাদের মধ্যে আটটি নার্সিংহোমকে ইতিমধ্যে চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চালু হতে না হতেই ফের তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ উঠছে। তবে চুমকি লেটের ঘটনার পরে কড়াকড়ির মাত্রা বাড়াতে চাইছে প্রশাসন। জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুর আশ্বাস, “নার্সিংহোমগুলোর বিলে গোঁজামিল দিয়ে টাকা বাড়ানোর প্রবণতা রুখতে প্রশাসনিক স্তরেও তদারকি কমিটি গড়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন