বর্ধমানে বসে চিন্তায়। নিজস্ব চিত্র।
প্রায় তিন যুগ আগে ‘মুলুক’ ছেড়েছেন ওঁরা। তবে স্ত্রী-সন্তানেরা রয়েছেন বাপ-ঠাকুর্দার ভিটেয়। তালিবানের দখলে যাওয়া আফগানিস্তান আর পরিজনদের জন্য চিন্তা ঘুম কেড়েছে ওঁদের। বর্ধমানের ভাড়াবাড়িতে বসে নাজির খান, আনোয়ার খানেরা জানান, দিন ছয়েক আগে শেষ বার ফোনে কথা হয়েছে। তার পর থেকে আর ফোনে পাননি কাউকে। স্ত্রী-সন্তানের গলা শোনার অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।
শহরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কুণ্ডুপুকুর এলাকা ‘কাবুলি মহল্লা’ বলেই পরিচিত। দশ-বারো জন আফগান থাকেন সেখানে। তাঁরা জানান, কাবুল থেকে প্রায় বারো কিলোমিটার দূরে পাক্তিয়া এলাকায় তাঁদের প্রদেশ। সেখানেই ছোটখাট ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। ব্যবসায় প্রয়োজনেই বর্ধমান শহরে এসেছিলেন। তারপর থেকে এই জায়গাটাও তাঁদের ‘ঘর’। কলকাতার বড়বাজারে কাপড় ও শালের ব্যবসা করেন তাঁরা। সেখান থেকে জিনিস এনে বর্ধমানেও বিক্রি করেন। তবে জীবনের চেনা ছন্দ থমকে গিয়েছে আফগানিস্তানের পরিস্থিতিতে।
বাড়ির দাওয়ায় বসে নাজির খান বলেন, ‘‘দেশে আমার তিন সন্তান আছে। সব থেকে বেশি চিন্তা ওদের নিয়েই। ছ’দিন আগে শেষ বার কথা হয়েছে ফোনে। আর যোগাযোগ করতে পারিনি! ফোনই যাচ্ছে না।’’ এমনিতেও ওই দেশে নেটওয়ার্কের সমস্যা রয়েছে। ফলে, রোজ কথা হয় না। আর এখন যা খবর পাচ্ছেন সবই টিভি থেকে, দাবি তাঁদের। নাজির বলেন, ‘‘এই বিপদে না পারছি ওদের আনতে, না পারছি যেতে! কী করব, বুঝতে পারছি না। ওদের বাড়ি থেকে পারতপক্ষে বেরতে নিষেধ করেছি।’’
জরিফ খান, দিলা খানেরাও অপেক্ষা করছেন ফোনের। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক, এটাই তাঁদের প্রার্থনা। তালিবান নয়, আগের সরকারের শাসনই ভাল ছিল, দাবি তাঁদের।